ঝিনাইদহে জালভোটের উৎসব : পথে পথে ভোটারদের বাধা

স্টাফ রিপোর্টার: জালভোট দেয়া, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা প্রদান ও পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়ার মধ্যদিয়ে গতকাল শনিবার ঝিনাইদহ সদর ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে নির্বাচন শেষ হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঝিনাইদহ সদরের ৭টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এগিয়ে ছিলেন। অন্যদিকে হরিণাকুন্ডু উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নের দু’টিতে আওয়ামীলীগ ও ৫ টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা ছিলেন এগিয়ে। এদিকে ভোটগ্রহন চলাকালে ভোটকেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়ার একাধিক অভিযোগ করেছেন বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তারা জানিয়েছেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেও তারা কোনো প্রতিকার পাননি। তবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা জানান, ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিকে সদর উপজেলার ফুরসন্দি ইউনিয়নের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আজিজুর রহমান মন্ডল ভোটারদের হুমকি, কেন্দ্রে আসতে বাধা প্রদান ও জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে বেলা তিনটায় নির্বাচন বর্জনের ঘোষনা দেন। সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাল আজাদ পান্নু জানান, দলের নেতাদের বিষয়টি অবহিত করে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষনা দেন। অপরদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে মহিলাসহ চার ব্যক্তিকে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। জেলা নির্বাচন অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, হরিণাকুন্ডু উপজেলার কাপাসহাটিয়া ইউনিয়নে শীতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়ার অপরাধে আওয়ামীলীগ কর্মী মোতালেব জোয়াদ্দারকে (২৫) এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমান আদালত। একই ভাবে সদর উপজেলার কালিচরণপুর ইউনিয়নের উত্তর-কাষ্টসাগরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়ার সময় আল-আমিন নামের এক ব্যক্তিকে আটকের পর এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়। সরেজমিন দেখা গেছে, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে লাইনে দাঁড়িয়ে সরকারি দলের লোকজন ব্যাপক ভাবে ভোটারদের প্রভাবিত করে। বেলা ১১ টায় সদর উপজেলার হরিশংকরপুর ইউনিয়নের পানামি সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে নৌকা প্রতীক ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট দেখা যায়নি। একই অবস্থা ছিল হরিশংকরপুর ও সিতারামপুর কেন্দ্রে। পদ্মাকর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হরিণাকুন্ডু উপজেলার শিতলী মান্দারতলা, ভাতুড়িয়া, কাপাশহাটিয়া, ঘোড়দা কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ভোটারদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। পথে পথে বাধা দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এখানে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট ঢুকতে না দেয়ার অভিযোগ করেন একাধিক প্রার্থী। রঘুনাথপুর ইউনিয়নের ভবিতপুর কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখানে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে শাস্তি হিসেবে একজনের কান ধরে উঠবসা করানো হয়। এই কেন্দ্রে এক মহিলা ভোটার ভোট দিতে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তার ভোট অন্য কেউ দিয়ে দিয়েছেন। নিত্যানন্দপুর, পোড়াহাটি ও আড়ুয়াকান্দি কেন্দ্রে ব্যাপক জাল ভোট দিতে দেখা গেছে। এছাড়া সদরের নলডাঙ্গা ও ফুরসন্দি ইউনিয়নের বেশ কয়টি কেন্দ্রে সরকারি দলের সমর্থকরা ভোটারদের প্রভাবিত করে।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাল আজাদ পান্নু জানান, পোড়াহাটিতে রাশেদ আলী মেম্বারকে মারপিট করেছে সন্ত্রাসীরা। দুর্গাপুর, হিরাডাঙ্গা, চাপড়ি, কালীচরণপুর, নাচনা ও বড়কামারকুণ্ডু এলাকার ভোটাররা ভয়ে ভোট দিতে যেতে পারেননি। উত্তর কাষ্টসাগরা কেন্দ্রে রেজাউল ইসলাম মাস্টারকে মারধর করেছে প্রতিপক্ষরা। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে না পেরে ভোটাররা হতাশা প্রকাশ করেন। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, হুমকি-ধামকি ও ব্যাপক জাল ভোট দেয়ার মধ্যদিয়ে তাদের প্রার্থীদের বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ভোট শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।