রডের বদলে বাঁশ দেয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মনি সিং ঢাকায় গ্রেফতার

 

স্টাফ রিপোর্টার/দর্শনা অফিস: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ দোতলা ভবন নির্মাণে রডের পরিবর্তে বাঁশ কেলেঙ্কারি মামলার ১ নং  আসামি ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জয় ইন্টারন্যাশনালের মালিক মনি সিংকে (৪৫) গ্রেফতার করা হয়েছে। ৱ্যাব-৪ ঢাকা ও দুদক কুষ্টিয়া যৌথ অভিযান চালিয়ে ঢাকার মিরপুর পল্লবী বটতলা এলাকার ৪১/১ নং বাসার পঞ্চম তলার একটি ফ্লাট থেকে গতকাল শুক্রবার বেলা ১০টায়  গ্রেফতার করে। ফ্লাটটিতে মনি সিং’র স্ত্রীর বান্ধবী বাস করেন। মনি সিং সিলেট কোতোয়ালী থানার ৭৮ সাগরদিঘীপাড় এলাকার জোতিন সিং’র ছেলে।

গত ১১ এপ্রিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিনিয়র মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) মেরিনা জেবুন্নাহার বাদী হয়ে দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জয় ইন্টারন্যাশনালের মালিক মনি সিং, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারিং কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের (ইসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সাত্তার, প্রকল্পের ক্রয় বিশেষজ্ঞ আইয়ুব হোসেন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামাল হোসেনকে আসামি করা হয়। ১৩ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট   আব্দুল হালিম মামলাটিকে দুদক কুষ্টিয়া জেলা সমন্বয় কার্যালয়ের কাছে হস্তান্তরের আদেশ দেন।

দুদক কুষ্টিয়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুল গাফফার এবং ৱ্যাব-৪’র সহকারী পরিচালক কামরুল ইসলাম অভিযানে নেতৃত্ব দেন। বিকেলে মনি সিংকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হলে বিচারক ইমদাদুল হক তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতের উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) শহীদুর রহমান বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফাইটোস্যেনেটারি শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের আওতায় ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের কার্যালয় ও পরীক্ষাগার (অফিস কাম ল্যাবরেটরি) দোতলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ভবনটির লুভার নির্মাণে রডের বদলে বাঁশ ব্যবহারের অভিযোগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নির্মল কুমার দের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ৭ এপ্রিল সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং অভিযোগের সত্যতা পায়। ওই দিনই তারা নির্মাণ কাজ বন্ধের আদেশ দেন। একমাস ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। ৮ এপ্রিল  প্রকল্পের ক্রয় বিশেষজ্ঞ আইয়ুব হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল, ৯ এপ্রিল ফাইটোস্যেনেটারি শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের পরিচালক (উইং) সৌমেন সাহার নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি এবং ১১ এপ্রিল কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপপ্রাধন মাহবুবুল হক পাটোয়ারীর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল সরেজমিন যায়। বিভাগীয় শাস্তিমূলক হিসেবে প্রকল্প পরিচালক সাদেক ইবনে শামসকে কিশোরগঞ্জ ও ক্রয় বিশেষজ্ঞ আইয়ুব হোসেনকে বরগুনায় জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়।

সর্বশেষ গত ২৯ এপ্রিল শুক্রবার বেলা ১১টায় কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির তদন্ত দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রমাণ পেয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৫ সদস্যের এ  প্রতিনিধি দল। কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি পাবনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের নেতৃত্বে এই ৫ সদস্যের কমিটি তদন্তে করতে এসে ভবন নির্মাণে রডের বদলে বাঁশ ও ইটের খোয়ার পরিবর্তে সুরকিসহ নানা অনিয়মের সত্যতা পেয়েছেন। এলাকাবাসী দাবি তুলে বলেছে, দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার মনি সিংকে জিজ্ঞাসাবাদে হয়তো আরো দুর্নীতি ফিরিস্তি বেরিয়ে আসতে পারে।