একজন অসহায় মা ও তার ছেলে এবং

 

সকল সন্তানেরই উচিত পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্যপালনে আন্তরিক হওয়া। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় ছেলেদের ওপরই দায়িত্বটা একটু বেশিই বর্তায়। কেননা, মেয়েরা বিয়ের পর স্বামীর সংসার সামলাতেই নাকানি-চুবানি খায়। সমাজের অসহায় অনেক মা-ই ছেলের ভেতরেই নিজের স্বনির্ভরতার স্বপ্ন দেখেন, সেই স্বপ্নভঙ্গে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের গাড়াবাড়িয়ার মা নেকজান বিবি নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারেননি। গতপরশু প্রতিবেশীর ধারালো অস্ত্র বঁটির কোপে ক্ষতবিক্ষত হলে প্রসঙ্গটি আলোচনায় উঠে আসে। একই সাথে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে রোগী রাজশাহী অথবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ তথা রেফার করার বিষয়টিও প্রাসঙ্গিতা পায়।

একজন দরিদ্র পরিবারের সদস্য দরিদ্র রোগী। তার যাবতীয় ওষুধ-পথ্যও হাসপাতাল থেকে দেয়ার কথা। যদিও সর্বক্ষেত্রে তা অলিক স্বপ্নেরই সামিল। দফায় দফায় চিরকুট ধরিয়ে বলা হয়, ওষুধটা বাইরে থেকে কিনে আনতে হবে। দরিদ্র অনেক রোগীর লোকজনই ওষুধ কিনতে না পেরে অনিশ্চয়তার প্রহর গোনেন। এরপর যদি তাকে বলা হয়, তোমার চিকিৎসা এখানে হবে না, রাজশাহী বা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হবে। তখন ওই রোগী ও রোগীর লোকজনের মাথার ওপর যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, তাই বলে কি কোনো রোগীকেই রেফার করা যাবে না? কেন নয়, রেফার করার মতো গুলোকে তো রেফার করতেই হবে। গলা কাটা রোগীকে কি চুয়াডাঙ্গায় অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া যায় না? যায়। কে পোহায় অতো ঝামেলা? তার চেয়ে রেফার করলেই যখন দায় এড়ানো যায়, তখন কে রাখে বোঝা? যদিও হাসপাতালে নেকজান বিবির ক্ষেত্রে এরকম হয়েছে বলে বিশ্বাস করতে চাইনা আমরা।

একজন মা তার সন্তানদের তিল তিল করে বড় করে তোলে। পিতা? অধিকাংশই আগলে রাখেন। কেউ কেউ ব্যতিক্রম। সব কিছু ছেড়ে, ফেলে নিজের সুখের জন্য নতুন সংসার পাতে। সে রকমই এক (অ)মানুষ ঠাণ্ডু। সে গাড়াবাড়িয়ার নেকজান বিবিকে বিয়ে করে। এক ছেলে এক মেয়ে আসে ওদের সংসারে। শিশুকালেই ওদের ফেলে রেখে সরে পড়ে ঠাণ্ডু। মেয়ে বড় হলে বিয়ে দেবে। পরের ঘরে চলে যাবে। সেখানে সুখে থাকলেই মায়ের সুখ। আর ছেলে? ছেলেকে ঘিরেই মূলত মায়ের থাকে দুঃখ-কষ্ট জয়ের স্বপ্ন। নেকজান বিবিরও তাই ছিলো। বহু দিন ধরে সেই স্বপ্ন নিজের মধ্যে লালন করেছেন। ছেলে বড় হয়েছে। পরিশ্রম করে মায়ের কষ্ট দূর করার কথা ভাবার বদলে নিজেই বদলে গেছে। বিয়ে করে সাতগাড়িতে ঘরজামাই হওয়ায় মায়ের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নটা তছনছ হয়ে গেছে। সেই কষ্টেরই মূলত বহির্প্রকাশ গলায় বঁটির কোপ। যদিও নারীর গলায় বঁটির কোপের বিষয়টি তদন্তেরও দাবি রাখে। যদিও পুলিশের তরফে তেমন তাগিদ পরিলক্ষিত হয়নি, হয় না।

জগতের সকল পিতা-মাতা হোক সন্তানের আদর্শ। সকল সন্তান হোক পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্যপরায়ণ। আর হাসপাতালে ভর্তি রোগীকে ঢালাও স্থানান্তর করতে বলার আগে সার্বিক দিকটাও বিবেচনা করা দরকার। রেফার করে দায় এড়ানোর আগে বিবেকের দায়মুক্তির বিষয়টিও গুরুত্ব দেয়া দরকার। নেকজান বিবি গলায় বঁটির কোপ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর খবর পেয়ে সেই ছেলে মায়ের শয্যাপাশে পৌঁছায়। নিশ্চয় অনুসূচনায় সে সুধরে নিতে পেরেছে নিজেকে। ছেলে হাসান তার মাকে সুস্থ করে তুলতে সক্ষম হোক। চিকিৎসকেরাও একজন অসহায় নারীকে সুস্থ করতে আন্তরিক হবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। চিকিৎসকেরা তো সেবার ব্রত নিয়েই নিয়োজিত মহান পেশায়।