পদ্মা সেতুতে থাকবে রেল লাইনও একনেকে প্রকল্প অনুমোদন

 

স্টাফ রিপোর্টার: উদ্বোধনের দিন থেকেই পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চলাচল শুরুর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ জন্য চীন সরকারের সহায়তায় ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্পটিতে চীন সরকার ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকার সহায়তা প্রদান করবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে গতকাল একনেক বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানান, ২০১৮ সালে যেদিন পদ্মা সেতু যান চলাচলেন জন্য উন্মুক্ত করা হবে সেদিন থেকেই পদ্মা সেতুতে রেল চলবে। চীনের অর্থায়নে ২ শতাংশ সুদে এ ঋণ ২০ বছর মেয়াদে জিটুজি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহণসহ মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে প্রকল্প সাহায্য ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা এবং সরকারের নিজস্ব তহবিল (জিওবি) ১০ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। মন্ত্রী আরো জানান, রেল প্রকল্পটি পরবর্তীতে পায়রা সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশালেও রেল লাইন স্থাপনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন।

প্রকল্পের আওতায় ১৭২ কি.মি. নতুন রেললাইন স্থাপন করা হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-নড়াইল-যশোর-বেনাপল পর্যন্ত রেল সংযোগ স্থাপন হবে। ভবিষ্যতে রেললাইনটি ভারতের কলকাতা, কক্সবাজার এবং চীন-মিয়ানমার রেলওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার রেলওয়ে করিডর গঠন করা হবে। ১৭২ কি.মি. রেললাইন নির্মাণে ৩৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এ প্রকল্পটির জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের অধিকৃত কোনো জমি নেই। সম্পূর্ণ নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, জমির দামের দিক দিয়ে টোকিও, নিউইয়র্ক ও মুম্বাইয়ের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। তাই বেশি ব্যয় হচ্ছে।

এটি বাস্তবায়ন হলে রেল পথে ঢাকা-যশোর রুটে দূরত্ব কমবে প্রায় ১৮৫ কি.মি.। ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-দর্শনার মধ্যে দূরত্ব কমবে যথাক্রমে ২২১ এবং ৪৪ কি.মি.। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নে মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেল চলাচলের জন্য আড়াই বছরের মধ্যে ঢাকা-মাওয়া অংশে এবং পদ্মা নদীর ওপারে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা জংশন পর্যন্ত রেলসংযোগ স্থাপন করা হবে।

গতকাল ৪৪ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ৯টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সভায় ৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকা ব্যয় সম্বলিত ঢাকা খুলনা (এন-৮) মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে মাওয়া পর্যন্ত এবং ভাঙা অংশ ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ ৪ লেনে উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পটি পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচলের সাথে সংশ্লিষ্ট। সেজন্য মহাসড়কটি ৪ লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। এ মহাসড়কটির দুই দিকে ধীরগতি সম্পন্ন যানবাহনের জন্য পৃথক সার্ভিস লেনের ব্যবস্থা করা হবে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নেও সেনাবাহিনীকে যুক্ত করা হয়েছে।

সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্প হলো, ৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে জাতীয় মহাসড়ক এন-৭ এর মাগুরা শহর অংশের রামনগর মোর হতে আবালপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প, ১ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট বিভাগের বিদ্যুত্ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প, ৫৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে উপকূলীয় ও ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকায় বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প, ৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রাণিরোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প (২য় সংশোধিত), ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে উদ্যানতাত্ত্বিক ফসলের গবেষণা জোরদারকরণ এবং চর এলাকায় উদ্যান ও মাঠ ফসলের প্রযুক্তি বিস্তার প্রকল্প, ১৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প এবং ৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ বেতারের মহাশক্তি প্রেরণ কেন্দ্রে ১০০০ কিলোওয়াট মধ্যম তরঙ্গ ট্রান্সমিটার প্রকল্প।