আতঙ্ক ছড়িয়ে কবিরাজের জমজমাট বাণিজ্য

 

মনজুর আলম: জিনসাপের আতঙ্ক ছড়িয়ে জমজমাট অর্থবাণিজ্য শুরু করেছে ঝিনাইদহ জেলা সদরের ডেফলবাড়ির মমতাজ কবিরাজ। আতঙ্কের শুরুটা অবশ্য সর্প দংশনের শিকার এক গৃহবধূর মৃত্যু। ওই গৃহবধূকে হাসপাতালে নেয়ার বদলে মমতাজ কবিরাজের নিকট নেয়া হলে শুরু হয় ঝাঁড়ফুঁকের নাটক। গৃহবধূ মারা গেলে মতলববাজ কবিরাজ মমতাজ প্রচার করে জিনসাপে দংশন করেছে বলেই বাঁচানো গেলো না। ওই সাপ গ্রামেই রয়েছে। ব্যাস! এরপর গ্রামের আবাল বৃদ্ধা-বনিতা সাপ আতঙ্কে ভুগতে শুরু করে। কাঠি দেখলেও সাপ ভেবে চিৎকার দেয়ার পাশাপাশি তাকে দংশন করেছে বলে জানিয়ে যন্ত্রণার কথা জানাচ্ছে। চিকিৎসার জন্য নেয়া হচ্ছে ওই কবিরাজের কাছে। কবিরাজ প্রস্তুত। ঝাঁড়ফুঁকের নাটক করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার মধ্যদিয়ে কাটিয়ে তুলছে ভীতি।

জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদরের কুমড়াবড়িয়া ইউনিয়নের ডেফলবাড়ি গ্রামের খাদেজা বেগম গত ২৮ মার্চ গাদা থেকে বিচুলি নিতে গেলে বিষধর সাপ তাকে দংশন করে। স্থানীয়রা খাদেজা বেগমকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় একই গ্রামের কথিত কবিরাজ মমতাজের কাছে। দীর্ঘক্ষণ তন্ত্র-মন্ত্র আর ঝাঁড়ফুঁক করেও তাকে বাঁচাতে পারেনি কবিরাজ মমতাজ। জিনসাপে দংশনের ফলে তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি বলেও অজুহাত দেখিয়েছে কথিত ওই কবিরাজ। জিনসাপে দংশিত হয়ে মৃত্যুর গুজবের পর থেকেই গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক শুরু হয়। গত এক মাসে গ্রামের আতঙ্কগ্রস্ত দেড় শতাধিক মানুষকে দেয়া হয়েছে জিনসাপে দংশনের চিকিৎসা।

আতঙ্ক ছড়ানোর পর বাণিজ্য শুরু করে কথিত কবিরাজ মমতাজ। গত এক মাসে গ্রামের স্কুল শিক্ষার্থীসহ দেড় শতাধিক মানুষ অদৃশ্য জিনসাপে দংশনের চিকিৎসা নিয়েছে। আর কবিরাজের ছাদগার নামে অর্থবাণিজ্য করারও অভিযোগ উঠেছে। গ্রামবাসীরা জানায়, এ পর্যন্ত ডেফলবাড়ি গ্রামের জয়নব বেগম, রোকেয়া বেগম, নাজিরা বেগম, আশরাফুল হক, নাজমুল হোসেনসহ দেড় শতাধিক গ্রামবাসী জিনসাপে দংশনের চিকিৎসা নিয়েছে। অদৃশ্য জিনসাপে তাদেরকে দংশন করেছে এই আতঙ্কের কারণেই তারা কথিত ওই কবিরাজ মমতাজের কাছে চিকিৎসা নেন। এই সুযোগে চিকিৎসার নামে ঝাঁড়ফুঁক, হাত চালান দিয়ে করছে বাণিজ্য। ছাদগার নামে জনপ্রতি নিচ্ছেন ১১০ টাকা।

অদৃশ্য জিনসাপে দংশন আতঙ্কে চিকিৎসা নেয়া আব্দুর রহিম জানান, গরমে বাড়ির পাশেই বসে ছিলাম। উঠতেই শরীরে ঝিমঝিম আর মাথাঘোরা মত হল। গ্রামের মমতাজ কবিরাজের কাছে গেলাম, হাত চালান দিয়ে তিনি বললেন, বিষ মাথায় উঠে গেছে, দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। তার কাছ থেকে নেয়া হলো চিকিৎসা।

গ্রামের স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, এ পর্যন্ত স্কুলের প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থীকে মমতাজ কবিরাজ ঝাঁড়ফুঁক, হাত চালান দিয়ে বিষ নামিয়েছেন। ক্লাসের ফাঁকে শিক্ষার্থীরা হঠাৎ করেই চিৎকার দিয়ে কবিরাজের নিকট ছুটছে। কবিরাজও প্রস্তুত আছে চিকিৎসা দেয়ার জন্য ঝাঁড়ফুঁক করছে, হাত চালান দিচ্ছে। তিনি আরো জানান, আমি মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনো কাজে আসেনি।

ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম জানান, ঘটনাটি আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে গ্রামের লোকজনদের সচেতন করে তোলা হবে। সাপে কাটলে বা দংশন করলে কোনো কবিরাজের কাছে নই। দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।

তন্ত্র-মন্ত্র আর ঝাঁড়ফুঁকের বিষয়ে কবিরাজ মমতাজের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি নিজে থেকে কারো চিকিৎসা দিতে যাচ্ছি না। সবাই আমার কাছে আসছে। আমি সাপের বিষ ঝাড়াতে পারি তাই চিকিৎসা দিচ্ছি। কেউ যদি না আসে তবে চিকিৎসা দেবো না। তবে ছাদগার জন্য ১১০ টাকা নেয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।