স্বস্তির বৃষ্টির সাথে কালবোশেখীতে দামুড়হুদা পল্লিতে আমগাছ পড়ে একজন নিহত
স্টাফ রিপোর্টার: তীব্র দাবদাহ টানা ২৬ দিন অব্যাহত থাকার পর প্রাণজুড়োনো বৃষ্টি হয়েছে পয়লা মে রোববার বিকেলে। বৃষ্টি শুধু স্বস্তি দেয়নি, বৃষ্টির সাথে থাকা কালবোশেখী চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার ছয়ঘরিয়ায় একজনসহ সারাদেশে প্রাণ কেড়েছে কমপক্ষে ৬ জনের। গত শনিবার ওই রোববারের বৃষ্টি-ঝড়ের পুর্বাভাস দিতে না পারলেও আবহাওয়া অধিদফতর গতকাল দিয়েছে আশা জাগানোর মতোই পূর্বাভাস। যদিও মে মাসে ঝড় বৃষ্টির সাথে খরাও থাকতে পারে বলে জানানো হয়েছে পূর্বাভাসে।
আবহাওয়া অধিদফতরের মে মাসের জন্য দেয়া পূর্বাভাস অবশ্য সেই ঔৎসুক্যের কিছুটা হলেও উত্তর দিয়েছে। তাদের পূর্বাভাস বলছে, মে মাসে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক পরিমাণে হবে। তবে এই মাসে বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এটি ঘূর্ণিঝড়েও রূপ নিতে পারে। তা ছাড়া এ মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এবং মধ্যাঞ্চলে দুই থেকে তিনটি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং দেশের অন্যত্র তিন থেকে চারটি মৃদু থেকে মাঝারি কালবোশেখীতে আঘাত হানতে পারে। তবে শুধু কালবোশেখী আর বৃষ্টি হবে তা নয়, মাসের শেষের দিকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পাহাড়ি ঢল এবং হঠাৎ বন্যা হতে পারে। গতকালও দেশের চট্টগ্রাম, সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ডসহ চাঁদপুরে বৃষ্টি হয়েছে। এদিকে পরশু রোবার বিকেল বৃষ্টির প্রভাবে তাপমাত্রা তরতর করে কমেছে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো সাতক্ষ্মীরায় ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়ডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৩৪ দশমিক ৭ ও সর্বনিন্ম ২২ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, প্রচণ্ড দাবদাহের পর দমকা হাওয়া ও হালকা বৃষ্টিতে খানেকটা স্বস্তি মিললেও বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে দামুড়হুদার ছয়ঘরিয়া গ্রামের একটি পরিবারে। সরকারি কুটি বাগানের শতবর্ষি আম গাছ ভেঙে পড়লো ভূমিহীন দাউদের জির্ণ ঘরের ওপর। গাছের চাপায় মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে দাউদের। গুরুত্বর আহত হয়েছেন তার সহদোর বুদো। গত রোববার বিকেলে খানেকটা হঠাত করেই পশ্চিম আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। কিছুক্ষনের মধ্যেই শুরু হয় দমকা হাওয়া ও হালকা বৃস্টি। এ সময় যে যার মতো দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে ঠাই নেই। এমনিভাবেই নিরাপদ আশ্রয়ে ঠাই নেন, দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া কুঠিবাগান পাড়ার ভূমিহীন আইজুদ্দিনের ছেলে দাউদ ও বুদো। বোশেখী ঝড়ে সরকারি জমিতে বসবাসকারি দাউদের ঘরে ভেঙে পড়ে শতবর্ষি বুড়ো আমগাছ। গাছের গুড়িতে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান ৩ সন্তানের জনক দাউদ। গুরুত্ব আহত হয়েছেন দাউদের বড়ভাই বুদো। বুদোকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছে চুযাডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। এদিকে দীর্ঘদিন প্রচণ্ড দাবদাহের পর ঝড়ো হাওয়া ও হালকা বৃস্টিতে কিছুটা স্বস্তি মিললেও দাউদের পরিবারে নেমে আসলো শোকের কালো মেঘ। সংসারের অভিভাবককে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে স্ত্রী-সন্তানেরা।
আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, হঠাত আকাশে জমকালো মেঘ, ধুলিঝড়, মৃদু বৃষ্টি জনজীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। প্রচাণ্ড তাপপ্রবাহের পর গত রোববার বিকেলে জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়া এলাকায় ধুলিঝড়ের পর বৃষ্টির দেখা মিলেছে। বৃষ্টির পর শীতল বিশুদ্ধ বাতাসের পরশ পেয়ে আন্দুলবাড়িয়া মীরপাড়ার পেশায় ঘরামী বুড়ো খন্দকার স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলছেন, এক সাথে ৫০টি বৈদুতিক পাখার বাতাসে এতো শীতল ও বিশুদ্ধ বাতাসের পরশ পাওয়া যাবে না। শরীর ঠাণ্ডা হলো।
অপরদিকে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগরের পাটারীরহাট এলাকায় রোববার সন্ধ্যায় কালবৈশাখী ঝড়ে মেঘনা নদীতে ৩টি জেলে নৌকা ডুবে যায়। এতে জেলে শাহ আলমের শিশু পুত্র আরশাদ মানতা (২) মারা গেছে।
গাজীপুরে রোববার সন্ধ্যায় কালবোশেখী ঝড়ে দেয়াল চাপা পড়ে একজন নিহত হয়েছেন। নিহত মতি মিয়ার (৪৫) গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানার কালিয়ানিকান্দায়। কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার ঝুমুর গ্রামে আবদুর রশিদ (৭০) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। কালবোশেখী ঝড়ে তার ছিঁড়ে গিয়ে রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার দুপুরে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জেলার অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখান উপজেলার নাটেশ্বর গ্রামের মো. শহিদ (৪২) ঝড়ের সময় আতঙ্কে স্ট্রোক করে মারা যান ও বালুচর শ্যামল ছায়া প্রকল্পের কাছে দেয়াল ধসে নিহত হন নারায়ণগঞ্জ জেলার কানাই নগরের রিঙ্কু মিয়া (৩২)। দেয়াল চাপায় আহত হয়েছেন রতন বারি, বাতেন ও হুমায়ুন কবির নামে তিনজন।