চার বোনের নেশা-পেশা গর্ভ ভাড়া

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: গর্ভ ভাড়া দিয়ে নিঃসন্তান দম্পতির মুখে হাসি ফোটান তারা। আর এতেই চলে তাদের সংসার। শুধু গর্ভ ভাড়া দিয়েই প্রতি বছর ১০ হাজার পাউন্ড (১১ লাখ ৪০ হাজার টাকা) আয় করেন মেক্সিকোর ৪ বোন। গত বৃহস্পতিবার মেক্সিকোর টাবাসকো রাজ্যের ৪ বোনকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের দৈনিক ডেইলি মেইল।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মেক্সিকোর উন্নত অঞ্চলগুলোর অন্যতম টাবাসকোতে গর্ভ ভাড়া বা ‘সারোগেসি’ বাণিজ্যের বাজার এখন প্রায় ৯০ মিলিয়ন পাউন্ডের। সেখানে হার্নান্দেজ বোনদের মতো অনেকেই গর্ভ ভাড়া দিয়ে রুটিরুজি জোগান।

ওই ৪ বোন ডেইলি জানান, গর্ভ ভাড়া দিয়ে তারা ৯ মাসে যা রোজগার করেন, সেই পরিমাণ অর্থ আয় করতে তাদের ভাইদের ২০ বছর সময় লাগবে।

হার্নান্দেজ বোনদের সবচেয়ে বড় জন মিলাগ্রোস (৩০) জানান, তার হাত ধরে বাকি ৩ বোনের এই ব্যবসায় আসা। এখন মার্থা (২৯), মারিয়া (২৭) এবং পাউলিনা (২২) এই ব্যবসায় বেশ আয় করছে।

মিলাগ্রোস আরও বলেন, ‘প্রতিটি নারীর কাছে তার সন্তান অমূল্য ধন। কিন্তু আধুনিক যুগে সন্তান ধারণে অক্ষম নারীদের মা হওয়ার ধরন পাল্টেছে। দিন যতো এগোচ্ছে, প্রযুক্তি ততোই মানুষের অপূর্ণতাকে পূর্ণতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাই জমি ভাড়া নিয়ে ফসল উৎপাদনের মতো মায়ের গর্ভ ভাড়া নিয়ে সন্তান উৎপাদন আজ আর অবাক হওয়ার কোনো বিষয় নয়।’

মিলাগ্রোস জানান, নিঃসন্তান দম্পতিদের সন্তানের জন্য একটি ব্যবস্থা গর্ভ ভাড়া বা সারোগেশন। সারোগেশনের অর্থ হলো গর্ভধারণে সক্ষম মায়ের ভ্রূণে শুক্রাণু প্রতিস্থাপন করে সন্তান লাভ। তবে ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রে সারোগেশনের ব্যয় খুব বেশি। আর তাই ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রের সন্তান ধারণে অক্ষম নারীরা সারোগেশনের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর দিকে ঝুঁকছে বেশি।

হার্নান্দেজ বোনদের মেজো জন সার্গস মার্থা বলেন, ২৩ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের এক নিঃসন্তান দম্পতির জন্য গর্ভধারণ করেছিলেন তিনি। ৩৬ বছর বয়েসের ওই নারী ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। ক্যান্সারের কারণে তার গর্ভাশয়ের একটি অংশ অপসারণ করতে হয়। এতে চিরদিনের মতো সন্তান ধারণে অক্ষম হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু তার যে একটা সন্তান চাই। শেষে মেক্সিকোর এক এজেন্টের (চিকিৎসক) মাধ্যমে মার্থার সাথে যোগাযোগ করেন ওই নারী। শেষে মার্থার মাধ্যমেই সন্তানের মুখ দেখেছিলেন ওই নারী।

মার্থা জানান, চুক্তি অনুযায়ী জন্মদানের পর শিশুটি ১০ দিন তার কাছে ছিলো। বুকের দুধ খাওয়াতে হয়েছিলো শিশুটিকে, এরপর সদ্যোজাত শিশুটিকে পরিবার নিয়ে যায়। হার্নান্দেজ বোনদের আরেকজন বলেন, এটা তাদের পারিবারিক ব্যাবসায় পরিণত হয়েছে। যদিও তা ৪ দেয়ালের বাইরে বলার মতো বিষয় নয়। মার্থা জানালেন, গর্ভধারণের বিষয়ে কখনও কখনও অভিযোগের শিকার হতে হয়। বর্তমানে এক ফরাসির চার মাসের শিশুকে গর্ভে নিয়ে বেড়ানো এই নারী বলেন, একবার প্রতিবেশীরা আমাকে শিশু পাচারচক্রের সাথে জড়িত বলে সন্দেহ করেছিলো। আমরা কোনো অন্যায় করছি না। কিন্তু আমরা ৪ বোনই বেকার ‘অবিবাহিত মা’ যারা আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছি।

Leave a comment