অশান্ত কুষ্টিয়ায় চার দিনে তিনজন নিহত

 

স্টাফ রিপোর্টার: কুষ্টিয়ায় হঠাৎ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে জেলায় খুন-খারাবি বেড়ে গেছে। এর মধ্যে চার দিনের ব্যবধানে এক স্কুলশিক্ষক ও এক মত্স্যখামারিসহ তিনজন নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। এসব ঘটনাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করলেও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এক সময়ের চরমপন্থি অধ্যুষিত কুষ্টিয়া এখন অনেকটাই শান্ত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে চরমপন্থি সন্ত্রাসীরা নির্মূল হলেও হঠাৎ করে বেড়ে গেছে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। মাঝে মধ্যেই ঘটছে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা। সর্বশেষ গত ২৮ এপ্রিল সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়নের দহকুলা বাজারে প্রকাশ্য দিবালোকে নিজ বাড়িতে খুন হন মত্স্যখামারি মোল্লা মাসুদ করিম লাল্টু (৪২)। অভিযোগ মোল্লা মাসুদ করিম লাল্টু ওই ইউনিয়ন পরিষদের আসন্ন নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজ উদ্দীন শেখের পক্ষ নেয়ায় সেখানকার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান বিশ্বাস দল বল নিয়ে বাড়িতে হানা দিয়ে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। শুধু তাই নয় হামলার সময় আখতারুজ্জামান বিশ্বাস নিজের লাইসেন্স করা শটগান থেকে মুহুর্মুহু গুলি ছুড়ছিলেন বলেও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ।

স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজ উদ্দীন শেখের অভিযোগ, ঘটনার আগের দিন ওই ইউনিয়নে এক নির্বাচনী সভায় জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা উসকানিমূলক বক্তব্য না দিলে আখতারুজ্জামান বিশ্বাস এমন ধৃষ্টতা দেখাতেন না। এদিকে ওই ঘটনায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আখতারুজ্জামান বিশ্বাসকে প্রধান আসামি করে মামলা হলেও তিনি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। এর আগে ভেড়ামারা উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের ফকিরাবাদ গ্রামে গত ২৫ এপ্রিল রাতে এশার নামাজ শেষে ফেরার পথে নিজ বাড়ির কাছেই নৃশংসভাবে খুন হন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান (৬৮)। আহত হন তার ছোট ভাই মিজানুর রহমান (৬২)। পরে গত ২৮ এপ্রিল সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মিজানুর রহমানও মারা যান। অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া নাতনি শ্রাবণী আক্তার তৃষাকে দীর্ঘদিন থেকে উত্ত্যক্ত করে আসছিলো ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় থাকা বখাটে যুবক আরিফুল ইসলাম আরিফ। শ্রাবণীর দাদা শিক্ষক মজিবর রহমান এই অভিযোগ করেছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে। আরিফকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিলো। তবে ক্ষমতাসীনদের চাপে তাকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ছেড়ে দেয় পুলিশ। অভিযোগ আরিফুল ইসলাম আরিফ দলবল নিয়ে হামলা চালিয়ে দুই ভাই মজিবর রহমান ও মিজানুর রহমানকে খুন করে। এ ঘটনায় মামলা হলেও আসামিরা ধরা পড়েনি। এ ছাড়া নিহত দুই ভাই বিএনপি সমর্থক। ভেড়ামারা উপজেলার সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তারা বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর প্রচারণায় অংশ নিয়ে ক্ষমতাসীনদের বিরাগভাজন হন।

অন্যদিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে আরও সহিংস ঘটনার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। আগামী ৭ মে এখানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা নির্বাচনে যেনতেনভাবে জিততে এলাকায় মহড়া দিচ্ছেন। ঘটছে বিরোধী পক্ষের সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা। বিশেষ করে উপজেলার আবদালপুর, হরিনারায়ণপুর, গোস্বামী দুর্গাপুর ও আলামপুর ইউনিয়নে প্রায় প্রতিদিনই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের মারধর-হামলার শিকার হচ্ছেন প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লোকজন। এতে বিশেষ করে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাথে তাদের বিরোধ তৈরি হচ্ছে। এদিকে হঠাৎ করে জেলায় আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি মহাজোটের অন্যতম শরিক জাসদ নেতারাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জেলা জাসদ সভাপতি গোলাম মহাসিন বলেন, একটি গোষ্ঠী স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবহার করে ইউপি নির্বাচনে পেশিশক্তি ব্যবহার করছে। এর ফলে জেলায় নির্বাচনী সহিংসতা বাড়ছে। তবে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে মানতে নারাজ আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন, পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখক কুষ্টিয়ার আইনশৃঙ্খলা ভালো। এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম বলেন, উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি। তার মতে সম্প্রতি যেসব ঘটনা ঘটেছে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এ ব্যাপারে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।