দর্শনার উদ্ভিদ সংগনিরোধ ভবন নির্মাণে দুর্নীতি ও অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না
দর্শনা অফিস: চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় দুই কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ ভবন নির্মাণে রডের বদলে বাঁশ ব্যবহারের অভিযোগ এবার তদন্ত করছে কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির সভাপতি পাবনা-৩ আসনের সাংসদ মকবুল হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদল গতকাল শুক্রবার সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় আলোচিত ওই ভবনে উপস্থিত হন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা তদন্ত শুরু করে। এ সময় তারা নির্মাণকাজের সাথে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, প্রধান নির্মাণ শ্রমিক, গণমাধ্যমকর্মী, জনপ্রতিনিধি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন।
২৩ দিনে মাথায় গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি পাবনা-৩ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। স্থায়ী কমিটির সভাপতি মকবুল হোসেন উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, দর্শনার উদ্ভিদ সংগনিরোধ ভবন নির্মাণে দুর্নীতি ও অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। আমরা কি দেখলাম, কি পেলাম, তা আমরা দেশের মানুষকে শিগগিরই জানাবো। যেই দোষ করুক তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে স্থায়ী কমিটির সদস্য সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাঁশ কেলেঙ্কারির পেছনে স্থানীয় রাজনৈতিক বিষয় জড়িত বলে অভিযোগ করলে দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ করেন। সিরাজুল বলেন, চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি এই প্রকল্পের বিষয়ে স্থানীয় রাজনীতিকেরা কোনো সুবিধা নেননি।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ জেলা আ.লীগের সভাপতি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় হুইপ বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম ওমর, বগুড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজাইল করিম তানসেন, গাইবান্ধা-৪ সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. উম্মে কুলছুম স্মৃতি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শরিফ হোসেন, কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মনজু, জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন, দামুড়হুদা উপজেলা আ.লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ঝন্টু, দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান, দর্শনা পৌর আ.লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, জেলা কৃষি অফিসার নির্মল কুমার দে, দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার সুফি মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান প্রমুখ। নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতেই ভাঙা হয় ছাদ। তবে ছাদ ঢালাইয়ে কি ধরনের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে তা জানানো হয়নি। পরীক্ষা-নিরিক্ষার পর তা জানানো হবে বলে তারা জানান।
উল্লেখ্য, ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যায়ে দর্শনা উদ্ভিদ সংগোনিরোধ কেন্দ্র ভবন নির্মাণকাজে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে দ্বিতল ভবনের এ নির্মাণ পিলার ঢালাইয়ে ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশের কাবারি। ত্রুটিতে পরিপূর্ণ নির্মাণকাজের প্রতিরোধে এলাকাবাসী বারবার হোঁচট খেলেও অবশেষে কড়া প্রতিবাদ। প্রতিবাদকারীদের অবস্থান টের পেয়ে যায় নির্মাণ কাজের দেখভালের দায়িত্বরত ম্যানেজার, ইঞ্জিনিয়ার ও নির্মান শ্রমিকরা। ত্রুটি খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে যান কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা।
গত বছরের ১ ডিসেম্বর ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ জেলার কৃতীসন্তান হামিদুর রহমান। সে থেকে শুরু হয় দ্বিতল ভবন নির্মাণকাজ। অভিযোগ উঠেছে, ভবন নির্মাণের আগে নির্মাণ করা হয় সীমানা প্রচীর। বেশির ভাগ সময় রাতের আঁধারেই নির্মাণ কাজ করেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ঢাকার জয় কনস্ট্রাকশন। স্থানীয়রা বারবার নির্মাণ কাজের সচ্ছতা দেখার চেষ্টা করা হলোও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেখতে দেয়া হয়নি। ইট, বালি, খোয়া ও রড নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মাণ কাজ করা হয়েছে বলেই অভিযোগ এলাকাবাসীর। সরকারের এ ধরনের একটি ভবন নির্মাণকাজের কোনো প্রকার সাইনবোর্ড টানায়নি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। যে কারণে তিমিরেই থেকে যায় নির্মাণকাজের বরাদ্দ ও সচ্ছতা। নির্মাণ শ্রমিকদের অগচোরে স্থানীয়রা লুকিয়ে ভবনে প্রবেশ করে খানেকটা চমকে ওঠে। দ্বিতল ভবনের পিলারগুলোতে রডের বদলে দেয়া হয়েছে বাঁশের কাবারি। পাঁচিলগুলো নির্মাণ করা হয়েছে বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহিত পুরাতন ইট দিয়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে ভবনে ভিড় জমে যায় উৎসুক জনতা। পরিবেশ পরিস্থিতি অস্বাভাবিক টের পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে কৌশলে পালিয়ে যায় নির্মাণকাজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী সুব্রত বিশ্বাস ও ম্যানেজার জেমসসহ নির্মাণ শ্রমিকরা। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান দর্শনা উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ অফিসের ইনচার্জ কামরুন-নাহার। কামরুন নাহারের উপস্থিতিতে উৎসুক জনতা ভবনের বিভিন্ন পিলার ভেঙে দেখতে পায় বাঁশের কাবারি। এতে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে উপস্থিত জনতা।