গাংনীতে কয়েকজন প্রার্থীর জরিমানা : আবারও মাইক ভাঙচুর : হুমকি

 

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনী মাঠ এখন উত্তপ্ত। প্রার্থী ও ভোটারদের হুমকি-ধামকির পাশাপাশি চলছে আচরণবিধি ভাঙার মহোৎসব। তবে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত বামন্দী, তেঁতুলবাড়িয়া ইউপিসহ বিভিন্ন স্থানে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অপরদিকে তেঁতুলবাড়িয়া ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচার মাইক ভাঙচুর করা হয়েছে।

তেঁতুলবাড়িয়া ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচার-প্রচারণা করছেন। আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে বৃহস্পতিবার তাকে এক হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়াও শুক্রবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের কর্মী কর্তৃক স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিরুল ইসলামের প্রচার মাইক ভাঙচুর ও শোডাউনের অভিযোগে আজ তাকে পুনরায় জরিমানা করা হবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল ইসলামসহ গাংনীর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বামন্দী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শহিদুল ইসলামের পক্ষে গণসংযোগ ও পথসভা করেন। সেখানে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে শহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের কাছ থেকে গতকাল শুক্রবার বিকেলে দুই হাজার টাকা জরিমানা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফ উজ জামানের ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই সাথে একজন মেম্বার প্রার্থীর কাছ থেকেও এক হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

এদিকে গতকাল বিকেলে তেঁতুলবাড়িয়া বাজারে আওয়ামী প্রার্থীর পথসভা চলার সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিরুল ইসলামের প্রচার মাইকিং ভাঙচুর করেন আব্দুল্লাহ আল মামুনের কর্মীরা। পরে অবশ্য বিষয়টি নিয়ে আমিরুলের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন মামুনসহ তার কর্মীরা। এদিকে আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান নাজমুল হুদাসহ কয়েকজন প্রার্থী। মামুনের লোকজন ওইসব প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি ও কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করছেন। প্রচার-প্রচারণায় বিঘ্ন সৃষ্টি করছেন। ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে কেন্দ্র দখল করতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। তবে মাইক ভাঙচুরকারীরা ক্ষমা প্রার্থনা করায় রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত কোনো অভিযোগ করা হচ্ছে না বলে জানান স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিরুল ইসলাম।

গাংনী থানাসূত্রে জানা গেছে, নাজমুল হুদাসহ কয়েকজন প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে কাজ করছে পুলিশ। এ বিষয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রচার-প্রচারণায় বাধা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের পাশাপাশি রাইপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত প্রার্থী ইসমাইল হোসেনকে প্রাণনাশের হুমদি দেয়া হয়েছে। রাতের আঁধারে যেকোনো সময় ইসমাইলের উপর আঘাত আসতে পারে। তাকে গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণা করতে নিষেধ করছে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা। তাদের কথা না শুনলে বোমা মেরে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসমাইলের শুভাকাঙ্ক্ষীরা। এদিকে বৃহস্পতিবার থেকে ইসমাইলকে এমন হুমকি দেয়ার পর আরো চাঙ্গা হয়ে উঠেছে তার কর্মীরা-সমর্থকরা। গণসংযোগসহ অন্যান্য প্রচারণার ক্ষেত্রে সজাগ দৃষ্টি রাখছে কর্মীরা।

এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইসমাইল হোসেন জানান, বাঁচা-মরার মালিক আল্লাহ। তিনি কোনো হুমকিতে ভীত নয়। যেকোনো সমস্যা মোকাবেলায় তিনি প্রস্তুত রয়েছেন। কাথুলী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ প্রার্থী মিজানুর রহমান রানার বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী। নওপাড়া বাজার থেকে টেঙ্গারমারী পর্যন্ত গ্রামের প্রধান সড়কের পাশে রানার ১০/১২টি নির্বাচনী অফিস রয়েছে। সেখানে আলোক সজ্জাও করা হয়েছে। এছাড়াও রানা ও তার কর্মীদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র ও বিএনপি প্রার্থীর ভোটারদের হুমকি-ধামকির অভিযোগ রয়েছে। গাড়াবাড়ীয়া ও সহগলপুরসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারার হুমকি দিচ্ছেন রানার কর্মীরা। এ কারণে ওই দুই কেন্দ্রের আওতাধীন ভোটাররা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

অভিযোগের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে রানার অফিস থেকে আলোকসজ্জা অপসারণ করা হয়েছে বলে জানান গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ উজ জামান। আজ শনিবার তার নির্বাচনী ক্যাম্পগুলো অপসারণ করে তাকে অর্থদণ্ড করা হবে বলেও জানান তিনি।

বিভিন্ন এলাকার প্রার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেন জানান, প্রকাশ্যে সিল মারার কোনো সুযোগ নেই। যেসব এলাকার প্রার্থীরা এমন হুমকি দিয়েছে সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার মধ্য দিয়েই ভোট হবে। মোতায়েন থাকবেন ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়াও যারা হুমকি-ধামকির সাথে জড়িত তাদেরকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। ভোটগ্রহণের আগে ও পরে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা ছাড় দেবে না পুলিশ।