পুলিশের চেকপোস্ট এড়াতে গিয়ে নিহত সাবেক সেনা সদস্য : বাসে আগুন

 

গাংনী প্রতিনিধি: পুলিশ চেকপোস্ট এড়াতে গিয়ে প্রাণ হারালেন আবু বক্কর সিদ্দিকী (৫৫) নামের এক মোটরসাইকেল চালক। আকস্মিক পেছনের দিকে ফিরতে গিয়ে বাসের সাথে ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যার দিকে মেহেরপুর গাংনী শহরের অদূরবর্তী ফতাইপুর নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। উত্তেজিত জনতা বাসটিকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। নিহত আবু বক্কর সিদ্দিকী ধর্মচাকী গ্রামের খেদের আলীর ছেলে এবং প্রাক্তন সেনা সদস্য ছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যার বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলযোগে গাংনী শহরের দিকে যাচ্ছিলেন আবু বক্কর। এ সময় ফতাইপুর নামক স্থানে গাংনী থানা পুলিশের মোটরসাইকেল চেকিং চলছিলো। চেকিঙের দায়িত্বপ্রাপ্ত গাংনী থানার এসআই শহিদুল ইসলাম তাকে থামতে নির্দেশ দেন। তবে মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন না থাকায় তিনি মোটরসাইকেলটি ঘুরিয়ে পেছন দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। দ্রুত পালাতে গিয়ে পেছন থেকে কুষ্টিয়া থেকে মেহেরপুরগামী একটি যাত্রীবাহী বাসের সাথে ধাক্কা লাগে। বাসের চাকার নিচে আটকে যায় আবু বক্করের ব্যবহৃত ডিসকভারি মোটরসাইকেলটি। বাসের সাথে ধাক্কা লেগে সড়কের ওপরেই ছিটকে পড়েন তিনি। ধাক্কা লাগার সাথে সাথে বাসের চালক বাস থামিয়ে আত্মগোপন করেন। একে একে যাত্রীরাই বাস থেকে নেমে সরে পড়েন।

স্থানীয় লোকজন আবু বক্করকে উদ্ধার করে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্মরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। লাশ নিজ বাড়িতে ফিরিয়ে নেন পরিবারের সদস্যরা।

এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ধর্মচাকী, ফতাইপুর, চেংগাড়া ও পূর্ব মালসাদহসহ আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ভিড় করে। এ সময় এসআই শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে চড়াও হয় জনতা। মোটরসাইকেল চেকিঙের নামে ঘুষবাণিজ্য, সাধারণ মানুষের সাথে অসদাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিক্ষুদ্ধ মানুষ। বিষয়টি প্রাথমিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হলেও বাসের প্রতি কুদৃষ্টি পড়ে কিছু অসাধু মানুষের। দীর্ঘক্ষণ চেষ্টার পর বাসের চাকার নিচ থেকে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে ধর্মচাকী গ্রামের কয়েকজন।

এদিকে মোটরসাইকেলটি বের করার পর বাসের গ্লাস ভাঙচুর করে আকস্মিক আগুন ধরিয়ে দেয় ধর্মচাকী ও ফতাইপুর গ্রামের কিছু লোকজন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের কয়েকজন সদস্য এমন অভিযোগ করে তাদের প্রতিরোধ করেন। শ্রমিকদের প্রতিরোধে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় ভাঙচুরকারীরা। তকে মুহূর্তেতের মধ্যেই বাসের জানালা দরজার ভাঙচুর হওয়া কাঁচ, সিটসহ ডেকোরেশন পুড়ে যায়। পরে অবশ্য ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভালেও বাসটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান কয়েকজন শ্রমিক।

মেহেরপুর জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের লাইন সম্পাদক আবুল কালাম, মনিরুজ্জামান মনি ও শ্রমিক নেতা নাসির উদ্দীনসহ শতাধিক শ্রমিক দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে বাসটি রক্ষার চেষ্টা করেন। কিন্তু আকস্মিকভাবে অজ্ঞাত কয়েক যুবক আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। শ্রমিক ও পুলিশের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকলেও তীব্র গরমের কারণে নিমিষেই বাসের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান কয়েকজন বাসশ্রমিক।

শ্রমিকরা জানান, পরিবেশ যখন শান্ত হচ্ছে ঠিক তখনই ফতাইপুর ও ধর্মচাকী গ্রামের কতিপয় মানুষ বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। যা খুবই দুঃখজনক। বাসে অগ্নিসংযোগকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা। নিহতের মরদেহ নিজ বাড়িতে পৌঁছুলে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। গৃহকর্তার আকস্মিক এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।

নিহতের পারিবারিক পরিচয়: পারিবারিক জীবনে নিহত আবু বক্কর সিদ্দিকীর দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে খাদিদুল ইসলাম চাষাবাদ দেখাশোনা করেন। ছোট ছেলে রাজু আহম্মেদ কুষ্টিয়ার একটি কলেজে এইচএসসির ছাত্র। একমাত্র মেয়ে বিবাহিতা। তার মৃত্যুতে স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা দিশেহারা। গ্রামের মানুষেরও বিশ্বাস করতে করতে কষ্ট হচ্ছে তার শূন্যতাকে। সর্বদা ভালো কাজের সাথে জড়িত একজন ভালো মানুষ উল্লেখ করে তার স্মৃতিচারণ  করে চোখের পানি ঝরাচ্ছে গ্রামবাসী।

নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে লাশের ময়নাতদন্ত ও মামলার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে অনীহা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু পরে মামলার সিদ্ধান্ত নেন তারা। রাত বারোটার দিকে গাংনী থানা পুলিশ লাশ তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রহণ করে থানায় নিয়ে যায়। আজ মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানায় পুলিশ। এ ঘটনায় উভয়পক্ষে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানায় পুলিশ।

গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেন উভয়পক্ষ থেকে মামলা দেয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করা হয়েছে। তবে গতরাত পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি তিনি। মামলা দিলে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।