রাজধানীর কলাবাগানে জোড়া খুনের ঘটনায় ২টি মামলা : খুনিরা প্রশিক্ষিত

খুনিদের পালিয়ে যাওয়ার ফুটেজ পুলিশের হাতে

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর কলাবাগানে জোড়া খুনের ঘটনায় অংশ নেয়া খুনিদের শনাক্ত করতে বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। এর মধ্যে হত্যা করে পালিয়ে যাওয়ার সময় খুনীদের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার একটি ফুটেজও পেয়েছে পুলিশ। স্থানীয় এক যুবক তার মোবাইলে এই ফুটেজটি ধারণ করেছিলো। ওই ভিডিও ফুটেজ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের হেফাজতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এদিকে জোড়া খুনের ঘটনার পর থেকে লেক সার্কাস রোড এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হলেও পুলিশ এখনো খুনিদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। হত্যার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় খুনিদের সাথে পুলিশের ৫ সদস্যের একটি টিমের গোলাগুলি ও ধস্তাধস্তি হয়। হত্যার ধরন দেখে খুনিরা জঙ্গি গ্রুপের সদস্য বলে ধারণা করছে পুলিশ।

ময়নাতদন্ত: দক্ষ হাতের কাজ, খুনিরা প্রশিক্ষিত। কোথায় আঘাত করলে মারা যাবে, সে ধরণের প্রশিক্ষণ নিয়েই তারা কুপিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ এ কথা বলেন। তিনি বলেন, এ ধরনের আঘাতের পর কারও বেঁচে যাওয়া সম্ভব নয়। জুলহাজের মাথার একই স্থানে উপর্যুপরি কয়েকটি আঘাত ছিলো। সেই আঘাত মাথার খুলি কেটে মগজ পর্যন্ত পৌঁছেছে। মাহবুব তনয়ের পিঠ ও মাথায় উপর্যুপরি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পিঠে আঘাতের কারণে তার স্পাইনাল কর্ড ছিঁড়ে গেছে। মাথার আঘাত মগজ স্পর্শ করে।

গতকাল কলাবাগানের ৩৫, উত্তর ধানমন্ডির (লেক সার্কাস) আছিয়া নিবাসের সামনে পুলিশের পাহারা বসানো হয়েছে। আশেপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। ভয়ে অনেকে কথাও বলতে চাচ্ছেন না। নিরাপত্তা কর্মীরা বাইরের কোনো ব্যক্তিদের বাসার ভেতরে যেতে দিচ্ছেন না। গেট তালা মেরে রাখা হচ্ছে। পুরো এলাকায় ভীতিকর অবস্থা। নিহত জুলহাজ মান্নানের লাশ দুপুরে অ্যাম্বুলেন্সে করে বাসায় আনা হয়। পরে জোহরের নামাজের পর তেঁতুল তলা মাঠে নামাজে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। মাহবুব তনয়ের বাবার নাম খন্দকার নূর-ই-রাব্বী। তিনি চট্টগ্রামে জাহাজে চাকরি করেন। বাড়ি টাঙ্গাঈলের নাগরপুরে। ঢাকায় তনয় মায়ের সাথে পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ৫১৩ নম্বর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ থেকে তনয়ের চাচা ফজলুর রহমান লাশ গ্রহণ করেন। পরে মিরপুর-১১ নম্বর সেকশনের কবরস্থানে দাফন করা হয়।

দুটি মামলা দায়ের: জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব তনয় খুনের ঘটনায় পুলিশ ও পরিবারের পক্ষ থেকে কলাবাগান থানায় দুটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে নিহত জুলহাজ মান্নানের বড় ভাই মিনহাজ মান্নান ইমনের করা হত্যা মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। কলাবাগান থানার এসআই শামীম আহমেদ অন্য মামলাটি দায়ের করেছেন পুলিশের ওপর হামলা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায়। এ মামলাতেও আসামি সেই অজ্ঞাতপরিচয় ৫-৬ জন। মামলায় পুলিশের এএসআই মমতাজ উদ্দিনের ওপর হামলা ও ঘটনাস্থল থেকে হামলাকারীদের ব্যবহৃত একটি ব্যাগ উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে। ব্যাগের মধ্যে ৭ পয়েন্ট ৬৫ বোরের যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি একটি অটোমেটিক পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলিসহ একটি ম্যাগজিন এবং দুই অংশে ভাগ হওয়া একটি গোলাকৃতি আগ্নেয়ান্ত্র, ১৩ ইঞ্চি একটি লোহার চাপতি, একটি লাল গামছা, একটি নীল রঙের শার্ট, ছাই রংয়ের পুরাতন লুঙ্গি, আরবী ও বাংলা লেখা কিছু কাগজপত্রসহ বেশকিছু মালামাল পাওয়া যায়। যা জব্দ করা হয় আলামত হিসেবে। কলাবাগান থানার ওসি মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, দুটি মামলাই দায়ের করা হয়েছে সোমবার রাতে। কাউকে এখনো আটক করা যায়নি।

দায় স্বীকার: আল কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশ (একিউআইএস) শাখা জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয় হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে খবর দিয়েছে জঙ্গি তত্পরতা পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ। মঙ্গলবার বিকালে মুফতি আব্দুল্লাহ আশরাফ নামে একজন একিউআইএস বাংলাদেশ শাখা আনসার আল ইসলামের মুখপাত্র হিসাবে পরিচয় দিয়ে টুইটারে দেয়া এক বিবৃতিতে দাবি করেছে তারা ওই দুজনকে হত্যা করেছে।

ভিডিও ফুটেজ পুলিশের হাতে: ইউএসএইডের কর্মকর্তা জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব তনয়কে হত্যার পর বাসা থেকে দুশ গজ দূরে কিংডম ভবনের সামনে এসে দাড়ায় খুনিরা। এই ভবনের একজন গাড়ি চালক জানান, সেখানে ৩০ থেকে ৪০ জন স্থানীয় যুবক খুনিদের ধাওয়া করে। এ সময় সেখানে দাড়িয়ে খুনিরা স্থানীয়দের লক্ষ্য করে এক রাউন্ড গুলিও ছোঁড়ে। এরপর তারা আবার সামনের দিকে দৌড় দেয়। তখন তাদের পেছনে পেছনে স্থানীয় এক যুবক সাহস করে খুনিদের পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করে রাখে। ডলফিন গলির আশেপাশে বেশ কয়েকটি বাসার সিসি টিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে গোয়েন্দারা।