নাম বিভ্রাটে ছাত্রলীগ কর্মীর পাপের বোঝা টানছে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আলমডাঙ্গার মাতৃহারা শরিফুল

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: হতভাগ্য শরিফুল ইসলামের এ দুরবস্থা জানতে হলে শুরুতেই ১ বছরের অধিক সময় পেছনে ফিরতে হবে। ২০১৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন দুপুরে চট্রগাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক ‘ভিএক্স’ (ভার্সিটি এক্সপ্রেস) পক্ষের কর্মী তারেক ইকবালের ওপর হামলা করে আরেক বগিভিত্তিক ‘বিজয়’ পক্ষের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় ওইদিন রাতে বিজয় পক্ষের ৫ নেতাকর্মীকে আসামি করে চট্রগামের হাটহাজারী থানায় মামলা করেন তারেক ইকবাল। পরদিন ১ মার্চ মামলাটি থানায় নথিভুক্ত হয়। এ মামলায় ৫ জন আসামির মধ্যে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের ২০১০-১১ সেশনের ছাত্রলীগ কর্মী শরীফুল ইসলাম ১ জন। হামলার শিকার এবং হামলাকারী উভয়ই ছাত্রলীগ কর্মী। অথচ এ হামলার  সাতে-পাঁচে না থেকেও এ মামলার বোঝা টানতে হচ্ছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আরেক শরিফুল ইসলামকে। আলমডাঙ্গা উপজেলার কাবিলনগর গ্রামের মহি উদ্দীনের মাহারা মেধাবী ছেলে এই হতভাগা শরিফুল ইসলামও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের একই সেশনের শিক্ষার্থী। কোনো ধরনের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা না থাকলেও শুধু হামলাকারী ছাত্রলীগ কর্মীর সাথে নামের মিল থাকায় নিরাপরাধ শরিফুলের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। পদার্থবিদ্যা বিভাগের একই সেশনে পড়ছেন ছাত্রলীগ কর্মী শরীফুলও। ফলে নাম বিভ্রাটে ছাত্রলীগ কর্মী শরীফুল ইসলামের বদলে সাধারণ শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলামই হয়ে পড়েন আসামি। গত বছরের ১৫ জুন আদালতে এ মামলার চার্জশিট দেয়া হয়। সেই চার্জশিটে ছাত্রলীগকর্মী শরীফুল ইসলামের নামের পরিবর্তে রয়েছে নিরাপরাধ শরিফুল ইসলামের নাম।

মামলার বাদী তারেক ইকবালের সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, আমার ওপর হামলার সাথে জড়িত ছিলো ছাত্রলীগ কর্মী শরীফুল ইসলাম। তাকেই আমি আসামি করেছিলাম। কিন্তু তার বদলে দুঃখজনকভাবে একই সেশনের আরেক নিরীহ ছাত্র একই নামের শরিফুল ইসলামের নাম অন্তর্ভুক্ত করে মামলার চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এ মামলা থেকে শরিফুলের নাম প্রত্যাহার ও আইনি সহায়তা চেয়ে গত ১২ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে এবং ১৭ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন করেছেন শরিফুল ইসলাম। একই ঘটনায় ১৮ এপ্রিল মামলার বাদী তারেক ইকবাল পদার্থবিদ্যা বিভাগের সভাপতির কাছে একটি আবেদন করেছেন। সেই আবেদনে তারেক লিখেছেন, ‘আমি বাদী হয়ে গত বছরের ১ মার্চ হাটহাজারী থানায় যে মামলাটি করেছিলাম, তাতে শরীফুল ইসলামকে আসামি করি। তার আইডি নম্বর ১১২০১১৪৮। কিন্তু তার জায়গায় একই সেশনের আরেক শরিফুল ইসলাম (যার আইডি ১১২০১০০৭) থাকা সত্ত্বেও পুলিশ ভুলবশত তাকে আসামি করে মামলাটির চার্জশিট দিয়েছে। তাতে লেখা হয়েছে এই নির্দোষ ছেলেটিকে হয়রানি না করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগ নিতে আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ রইলো। তারেক ইকবাল আরও বলেন, ‘আমি এতোদিন বিষয়টি জানতাম না। গত ১৭ এপ্রিল এ বিষয়টি জানতে পারি। এর পরই নির্দোষ শরিফুলকে হয়রানি না করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তার বিভাগীয় সভাপতির কাছে অনুরোধ করেছি।

শরিফুল ইসলামের বড় ভাই আব্দুল মতিন বলেন, আমার ছোট ভাই অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞানের মতো জটিল বিষয়ে পড়ছে। এ উটকো ঝামেলা এখন তার জীবনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের ভুলের মাসুল কেন একজন নিরাপরাধ ছাত্রকে দিতে হবে?

                গ্রামের মেম্বার ফরিদুল ইসলাম বলেন, শরিফুল ইসলাম শুধু অত্যন্ত মেধাবী একজন ছাত্রই নয়, সে খুব নিরীহ ছেলে। তার এমন দুরবস্থা মেনে নেয়া যায় না। শুধু নাম বিভ্রাটের কারণে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে পারে না।