স্টাফ রিপোর্টার: বৃষ্টির তেমন সম্ভাবনা নেই। ফলে দাবদাহ আরও বাড়তে পারে। আবহাওয়া অধিদফতর এরকমই পূর্বাভাস দিয়ে বলেছে, এপ্রিল মাসজুড়েই থাকবে তাপপ্রবাহ। তবে এ মাসের শেষের দিকে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। এদিকে দুঃসহ গরমে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরবাসীর কেবলই প্রতিক্ষা বৃষ্টির। আর পানীয় পানি? চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা যেমন বাড়তি পানি সরবরাহ করছে, তেমনই মেহেরপুরেও পৌর এলাকায় পানীয় পানির চাহিদা পূরণে পৌরসভা সোচ্চার। এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে ব্রিটিশ আমেরিকা টোব্যাকো লিমিটেডের স্থাপন করা বিশুদ্ধ পানীয় পানির কলটি গত দেড়-দু মাস ধরে অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে সচেতন অনেকেই বিনামূল্যের বিশুদ্ধ পানীয় পানি পাচ্ছেন না।
আবহাওয়া অফিস জানিয়ে, রাজশাহী, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা ও মংলায় তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর, মাঈজদিকোর্ট, শ্রীমঙ্গল, রংপুর, বরিশাল, খুলনার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তা অব্যাহত থাকতে পারে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, আগামীতে তাপমাত্রা আরও বাড়বে। বুধবার নাগাদ দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে দু পাঁচ দশকের রেকর্ড অতিক্রম করতে পারে। এমনিতেই জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। তীব্র গরমে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। একের পর এক হিটস্ট্রোকে মারা যাওয়ারও খবর মিলছে। চলতি গরম মরসুমে জীবননগরে ৭ জন হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগড়ব এলাকায় অবস্থান করছে। এ মরসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সৈয়দপুরে ৪০ দশমিক ২ ও সর্বনিম্ন ডিমলায় ১৭ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস রকর্ড করা হয়। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৩৮ দশমিক ৬ ও সর্বনিম্ন ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে আবহওয়া অফিস।
তীব্র তাপপ্রবাহে মাটিসহ সব কিছুই যেন তেতে উঠেছে। পানীয় পানির চাহিদা বেড়েছে। বোতলে ভরে বিক্রি করা ব্যবসায়ীদের কাটছে ব্যস্ত সময়। অতিরিক্ত চাহিদায় বাড়তি লাভও গুনছেন তাদের অনেকে। বিনামূল্যে আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ২০১২ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিকট ব্রিটিশ আমেরিকা টোব্যাকো কোম্পানির অর্থায়নে কল স্থাপন করা হয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ভোলানাথ দে উদ্বোধন করেন। গত দেড়-দু মাস ধরে ওখানে বিশুদ্ধ পানি মিলছে না। ফলে দীর্ঘদিন ধরে যারা বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতেন। তাদের মধ্যে বেড়েছে ক্ষোভ হতাশা। অবশ্য এ বিষয়ে গতকাল চুয়াডাঙ্গা জেলা কালেক্টরেটের নাজির আইনাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, দুটি ফিলটারই নষ্ট হয়ে গেছে। ব্রিটিশ টোব্যাকো কোম্পানিকে বিষয়টি অবগত করানো হয়েছে। শিগগিরই মেরামত করে দেবে বলে আমরা আশা করছি। এবার মেরামত করা হলে সর্বসাধারণের জন্য কলটি মুক্ত রাখা হবে না। কেননা, মুক্ত রাখার কারণে সারাদিনই বহিরাগতরা পানি নিতে ভিড় জমান। অতিরিক্ত চাপের কারণেই অল্প সময়ে ফিল্টার দুটি আটকে পানি বের হচ্ছে না। এদিকে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি) সাহীদুর রশীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, এমনিতেই ৭০ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করা হয়। গরমে গত বৃহস্পতিবার থেকে অতিরিক্ত পানি রাত সাড়ে ৯টা থেকে সোয়া ১০টা পর্যন্ত সরবরাহ করা হচ্ছে। অপরদিকে গ্রামবাংলায় ভূগর্ভের পানির স্তরও দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে সেচ খরচ যেমন বেড়ে যাচ্ছে তেমনই টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে। এ অবস্থা থেকে স্বস্তি দিতে দরকার ভারি বর্ষণ। তার তেমন আলামতই নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। যদিও গতরাতে চুয়াডাঙ্গার আকাশে মেঘের ঘনঘটা আর মৃয়মান বাতাস বইতে দেখে বৃষ্টির আশা জাগলেও তাতে কোনো লাভই হয়নি। মেঘগুলো উড়ে গেছে। রেখে গেছে আজসহ কয়েকদিনের তীব্র খরার পূর্বাভাস।