আলমডাঙ্গার ৬ ইউপি নির্বাচনে প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগে নির্বাচন অফিসের বিরুদ্ধে অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা উপজেলার ৬ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাচন অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নাম মাত্র কতিপয় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মাধ্যমিক স্কুল-কলেজের শিক্ষককে এ সকল দায়িত্ব দেয়া হলেও অধিকাংশ  টাকার বিনিময়ে নাম সর্বস্ব বিভিন্ন কোচিং সেন্টার ও কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক এমনকি চাকরি করেন না এমন ব্যক্তিকেও  নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।  সদ্য সরকারি হওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নেতাসহ বেশ কয়েক দালাল আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচন অফিসারের মাধ্যমে অবৈধভাবে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী দায়িত্বে তাদেরকে নিয়োজিত করেন। নির্বাচন অফিসের এ জালিয়াতির বিষয়টি সর্বত্র সমালোচনার ঝড় তুলেছে।

বিভিন্ন অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ এপ্রিল আলমডাঙ্গা উপজেলার ৬ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগ দিয়েছিলেন আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাচন অফিসার ছামিউল আলম। নিয়ম অনুযায়ী এ সকল নির্বাচনী দায়িত্বের জন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যাংক, বিভিন্ন স্কুল, মাদরাসা ও কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া। আপদকালীন জরুরি মুহূর্তে এনজিও’র কর্মকর্তাদেরও নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। তবে মাত্র ৬ ইউপি নির্বাচনের ক্ষেত্রে তা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। বৃহত্তর এ উপজেলায় কয়েক’শ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্কুল, মাদরাসা, কলেজের কয়েক হাজার শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। এছাড়াও রয়েছেন শতাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী। বরাবর তারাই নির্বাচনের গুরু দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অথচ সদ্য অনুষ্ঠিত উপজেলার ৬ ইউপি নির্বাচনে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাচন অফিস নামমাত্র কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা, কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তা, কিছু প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ শিক্ষক প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলেও বাকি অধিকাংশ অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার, কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের ঢালাওভাবে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এদের আবার বেশিরভাগই এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণও নেননি। ফলে এদের বিপরীতে প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্ধকৃত অর্থও হাতিয়ে নেয়া সহজ হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে আল একরা কিন্ডারগার্টেন, আপনজন কিন্ডারগার্টেন, শিশুকুঞ্জ, শিশু নিকেতনসহ বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেন ও কোচিং সেন্টারের শিক্ষকদের অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন, আল একরা থেকেই ২২ জন শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্ডারগার্টেনের এক শিক্ষিকাকে হাইস্কুল এমনকি কলেজ শিক্ষককে ডিঙ্গিয়ে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগের কেলেংকারি সৃষ্টি করা হয়েছে। সদ্য সরকারি হওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নেতা  আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচন অফিসারের মাধ্যমে অবৈধভাবে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী দায়িত্বে  তাদেরকে নিয়োজিত করেন। এ শিক্ষক নেতা প্রত্যেকের নিকট থেকে ৫শ করে টাকা নিয়ে ৩শ টাকা করে নির্বাচন অফিসারকে দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।  শুধু এ শিক্ষক নেতাই নন, আরও কয়েকজন দালাল এ কাজে নির্বাচন অফিস নিয়োজিত করে। এখানেই থেমে নেই আলমডাঙ্গা নির্বাচনী অফিসের ভয়াবহ দুর্নীতি ও আর্থিক কেলেঙ্কারির খতিয়ান। যিনি মোটেও চাকরি করেন না, তাকেও নির্বাচনের এমন দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়। বেলগাছি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ করতে দেখা গেছে তাকে। নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে এক দলিল লেখককেও।

এ বিষয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নেতা রেফাউল হক বলেন, নতুন ভোটার তালিকা, ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ তো প্রাথমিক, মাধ্যমিক শিক্ষকরাই করেন। অথচ তাদেরকে বাদ দিয়ে নির্বাচন অফিস এবার টাকা নিয়ে কিন্ডারগার্ডেনের শিক্ষকদের নিয়োগ দিয়েছে। নির্বাচন অফিসের এ নীতিভ্রষ্টার বিষয়টি তাদের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন।

এ অনিয়মের বিষয়ে প্রশ্ন করলে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাচন অফিসার ছামিউল আলম তা অস্বীকার করেন। তবে তার নিকট  নির্দিষ্টভাবে অনিয়মের উদাহরণ তুলে ধরলে তিনি চুপ থাকেন।

যেখানে স্কুল, কলেজের কয়েক হাজার শিক্ষক-কর্মচারী, কয়েক’শ সরকারি ও ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নির্বাচনের দায়িত্ব দেয়া হয়নি, অথচ বেশিরভাগ টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার ও কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এমনকি মোটেও চাকরি করেন না এমন গৃহবধূকেও নিয়োগের ঘটনা সর্বত্র সমালোচনার ঝড় তুলেছে। এমন অপকর্মের জন্য নির্বাচন অফিস কর্তৃক দালাল নিয়োগের কাহিনিও ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারি ও সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।