নির্বাচন শেষ হতে না হতেই আলমডাঙ্গার বেলগাছি ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামে নির্বানোত্তর ব্যাপক সহিংসতা

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: নির্বাচন শেষ হতে না হতেই আলমডাঙ্গার বেলগাছি ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামে নির্বানোত্তর ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। বিজয়ী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আমিরুল ইসলাম মন্টু ও পরাজিত প্রার্থী গোলাম সরোয়ার শামীমের সমর্থকদের মধ্যে গতকাল দিনভর মারামারি, বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে গুরুতর আহত নৌকা প্রতীকের সমর্থক মিশরকে হারদী স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। মিশর ফরিদপুর গ্রামের ওল্টুর ছেলে। পুলিশ দফায় দফায় ফরিদপুর গ্রামে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করে। চরম উত্তেজনা ঠেকাতে পুলিশ ফরিদপুর গ্রামে রাতেও অবস্থান নিয়েছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বেলগাছি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিরুল ইসলাম মন্টুর  বিরুদ্ধে উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার শামীম বিদ্রোহী প্রার্থী হন। শামীম চেয়ারম্যান পদে মাত্র ১৩৮ ভোটে পরাজিত হন। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মন্টুর নিজ গ্রাম বেলগাছি বাদে অন্য গ্রামগুলোর ভোটারদের বেশির ভাগ শামীমের পক্ষ নেয়। এ অবস্থায় শামীমের নিজ গ্রাম ফরিদপুরেও একটি প্রভাবশালী অংশ শামীমের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। নির্বাচনের ফলাফল জানার পরপরই ফরিদপুর গ্রামে চরম উত্তেজনা দেখা দেয় । গতকাল রোববার দুপুরে নৌকা প্রতীকের সমর্থকেরা মারধর, বাড়ি-ঘর ও দোকানপাটে হামলা করে ভাঙচুর চালিয়েছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেন পরাজিত প্রার্থী শামীম। এরপর বিকেলে আবারো শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। শামীমের সমর্থকেরা বিকেলে ফরিদপুর গ্রামের জোয়ার্দ্দারপাড়ার হারেজ আলীর ছেলে আশাকে মারধর করে। তার দোকানেও করা হয় মামলা। এ সময় ফরিদপুর গ্রামের ওল্টুর ছেলে মিশরকে দেখে তাড়া করে শামীমের সমর্থকেরা। তাকে পেয়ে লাঠিপেটা করা হয়। লাঠির আঘাতে মিশরের মাথা ফেটে যায়। তাকে উদ্ধার করে আলমডাঙ্গার একটি ক্লিনিকে নেয়া হলে অবস্থা খারাপ দেখে হারদী স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে রেফার করা হয়। মিশর আহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে শামীমের বিপক্ষ শিবিরে আরও বেশি উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তারা পরাজিত প্রার্থী শামীমের বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। শুরু হয় আবার নতুন করে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে রাতের অন্ধকারে সন্ত্রস্ত লোকজন এদিক ওদিক ছুটতে থাকে।

এরপর থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা দেখা দেয়। দুই পক্ষই দুই দিকে অবস্থান নেয়। সংবাদ পেয়ে আবারও পুলিশ ফরিদপুরে গিয়ে অবস্থান নেয়। এ ব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ আতিয়ার রহমান জানান, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ফরিদপুর গ্রামের পুরো রাত পুলিশি পাহারা বসানো হয়েছে। একজনের আহত হওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি জানান, এখনও কোনোপক্ষই মামলা করেনি।

গ্রামসূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন শেষ হলে ২৩ তারিখ রাত থেকেই ফরিদপুর গ্রামে অশান্তি শুরু হয়েছে। গতকাল সারাদিনই দফায় দফায় হামলা, মারধর ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে পুলিশের উপস্থিতিতে দু’পক্ষই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে। গ্রামের পরিস্থিতি থমথমে। অনেক বাড়ির পুরুষ মানুষ রাতে নিজ বাড়িতে না থেকে নিরাপত্তার আশায় অন্যত্র রাত্রি যাপনের উদ্দেশে বের হয়েছেন। অনেকে চাকরিসূত্রে অন্যত্র অবস্থান করেন। একপক্ষ রাত ২টার পর প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলার ঘোষণা দিয়ে গেছে। যে সকল বাড়িতে উপযুক্ত পুরুষ মানুষ উপস্থিত নেই- এমন বাড়ির মহিলারা আরও বেশি উৎকণ্ঠা নিয়ে রাতযাপন করছে।