তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস : জীবননগরে আরো একজনের হিটস্ট্রোকে মৃত্যু

চুয়াডাঙ্গাকে টপকে চলতি খরা মরসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস 

স্টাফ রিপোর্টার: কয়েকদিন আগে আবহাওয়াবিদেরা যে আশার বাণী শুনিয়েছিলেন, তা কাজে লাগেনি। বরঞ্চ তাপপ্রবাহের পরিধি বেড়েছে। চুয়াডাঙ্গা যশোরের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র দাবদাহ। গতকাল চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি খরা মরমুসে জীবননগরেই মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ৭ জনে। এদিকে চুয়াডাঙ্গায় একের পর এক মানুষ গরমজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

চলতি খরা মরসুমে সর্বাধিক তাপমাত্রা ৪১ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে গতকাল রোববার যশোরে। চুয়াডাঙ্গায় গতপরশুর চেয়ে সামান্য হ্রাস পেয়ে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো রংপুরে ২২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কক্সবাজার, কুতুবদিয়া ও টেকনাফে গতকাল সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। এদিকে তীব্র খরতাপে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরে বেলা বাড়তে না বাড়তেই রাস্তায় মানুষের চলাচল হ্রাস পাচ্ছে। গরমের ফল তরমুজ? বাজারে প্রর্যাপ্ত আমদানি থাকলেও রং প্রয়োগে বিষাক্ত করে তোলার শঙ্কায় অনেকেই সেদিকে তাকাতেও সাহস পাচ্ছেন না। চুয়াডাঙ্গার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রভাতি করা হয়েছে। দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঠন-পাঠন চলছে। তারপরও উপস্থিতির সংখ্যা আশাতীত নয়। এদিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও অভিন্ন চিত্র। হাসপাতালে সব বয়সী রোগীর সংখ্যাই বেড়েছে। ফলে চিকিৎসকেরা জরুরি কাজ না থাকলে তীব্র খরায় বাইরে বের না হওয়ার পরমর্শ দেয়ার পাশাপাশি বেশি বেশি করে পানি, পানি জাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, তৈলাক্ত খাবার পরিবহার করে শাক-সবজির দিকে বেশি আগ্রহী হলে তীব্র গরমে সুস্থ থাকা সম্ভব। অতিরিক্ত ঘামলে স্যালাইন খাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এ মরসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং বরিশার বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানতঃ শুষ্ক থাকতে পারে। ফরিদপুর, রাজশাহী, মংলা, সাতক্ষীরা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর, নোয়াখালী ও শ্রীমঙ্গল অঞ্চলসহ রংপুর ও বরিশাল বিভাগ এবং ঢাকা, রাজশাহী এবং খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। যদিও কয়েক দিন আগে আবহাওয়াবিদেরা পূর্বাভাস দিতে গিয়ে আশার বাণী শুনিয়ে বলেছিলেন, দু তিন দিনের মধ্যেই দেশের অধিকাংশ এলাকায় বৃষ্টি হবে। ফলে তাপমাত্রা হ্রাস পাবে। সে পূর্বাভাসের ধার দিয়েও যায়নি আবহাওয়া। দাবদাহ বেড়েই চলেছে। দিনে তীব্র খরায় মাটি চিরে চৌচির। জনজীবন হাফিয়ে উঠেছে।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, তীব্র দাবদাহের কবলে পড়ে চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে এক আড়ত কর্মচারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার আব্দুল গফুর (৪৫) হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি নারায়ণপুর গ্রামের মৃত আলী আজগারের ছেলে। দাবদাহের মধ্যে কাজ করাকালে আব্দুল গফুর হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হন। এ সময় তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ নিয়ে চলতি তাপপ্রবাহে এ উপজেলায় ৭ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দাবদাহ বিরাজ করছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলার তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে রেকর্ড গড়েছে। গত কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে। ফলে অফিসগামী মানুষ, স্কুলগামী শিক্ষার্থী এবং শিশু ও বৃদ্ধরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। গ্রীষ্মের প্রখর তাপদাহের অস্বস্তিতে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষও। সূর্য তেজদীপ্ত উদিত হয়ে সারাদিন দাবদাহে পুড়ছে ফসল, মাঠ-ঘাট। শুধু মানুষ নয়, গোটা প্রাণিকূলও দাবদাহ থেকে রক্ষা পেতে একটু স্বস্তির জায়গা খুঁজছে। এদিকে তীব্র তাপদাহের সাথে পাল্লা দিয়ে বিদ্যুতের ঘন-ঘন লোডশেডিংও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। গরমের কারণে সর্দি, কাশি, জ্বর, ডায়রিয়াসহ গরমজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা।

তাপপ্রবাহ: ফরিদপুর, রাজশাহী, মংলা, সাতক্ষীরা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর, নোয়াখালী ও শ্রীমঙ্গল অঞ্চলসহ রংপুর ও বরিশাল বিভাগ এবং ঢাকা, রাজশাহী এবং খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ তাপপ্রবাহ পরিধি অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।