আলমডাঙ্গার জামজামি ইউপি নির্বাচনে প্রতিবন্ধী যুবক রাজন ফুটবল প্রতীকে বিপুল ভোটে সদস্য নির্বাচিত

কেএ মান্নান: আলমডাঙ্গার জামজামি ইউপি নির্বাচনে প্রতিবন্ধী তরুন মাহমুদুর রহমান রাজন ফুটবল প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি প্রমাণ করলেন প্রতিবন্ধীরাও পারে শুধু প্রয়োজন সমাজের মানুষের ভালোবাসা। তবে মানুষের ভালোবাসা পেতে নিজের ও ভালোবাসা উৎসর্গের প্রয়োজন বলে তিনি জানালেন। জন্ম থেকেই অস্বাভাবিক দুটি পা নিয়ে ভূমিষ্ট হন তিনি। কষ্ট বুকে লুকিয়ে অশ্রুসজল চোঁখে বলে গেলেন শিশু যখন চলে ফিরে এটা ফেলে সেটা ভেঙে বাবা-মা স্বজনদের আদর-আর্তি পেয়ে ধন্য হয়। তখন দূটি বিকলাঙ্গ পায়ের অসরতা নিয়ে চলতে শিখেয়েছেন তিনি। ভাবার অবকাশ রাখেননি তিনি বিকলাঙ্গ এ সমাজে অচল।

সাধ্যের বাইরে ও বন্ধুত্বের নেশায় মাটি ছেঁছড়ে চলেছেন গ্রামের এ পাড়া কিম্বা অপর মহল্লায়। শিক্ষা জীবনে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই তাকে আর দশজন মানুষের কাছে নিয়েছে নিদ্ধিধায়। ক্লাব, খেলারমাঠ, রাজনৈতিক জনসভা মঞ্চে তার বক্তৃতা দর্শকবৃন্দ হয়েছেন চমকিত। বন্ধুরা তাকে যোগ্য মূল্যদিয়ে বসিয়েছেন জনসেবার আসনে। জামজামি ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড ঘোষবিলায় মোট ভোট ১ হাজার ৬শ ৪১ ভোট। কাস্টকৃত ১ হাজার ৩শ ১৩ ভোটের মধ্যে প্রতিবন্ধী রাজন আহমেদের ফুটবল প্রতীককে ৮শ ১৮ ভোট দিয়ে বিপুল ব্যবধানে ইউপি সদস্য নির্বাচিত করেছেন গ্রামবাসী।

রাজন দৈনিক মাথাভাঙ্গার প্রতিবেদককে অকপটে জানালেন, তিনি প্রতিবন্ধী ছোট মুদি দোকানি। নিত্যদিন দু কিলোমিটার সড়কে ছেঁছড়ে মালামাল সংগ্রহ শেষে দোকানে ক্রেতাদের মাঝে করেছেন বেঁচাবিক্রি। এরই মাঝে মোবাইলে ফ্লেক্সি লোর্ড, বিকাশে গ্রাহকদের টাকা লেনদেন, নগদ টাকার আমানত গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সঠিকভাবে পৌঁছে দেয়া তাকে দারুন বিশ্বাসী জনপ্রিয় হতে সহায়তা করেছে। ফ্লেক্সি লোর্ডের ব্যবসায় নেমে মাত্র কয়েক বছরেই ৪ হাজার গ্রাহকের পরিচিতিসহ তাদের মোবাইলফোন নম্বর তার দারুনভাবে আত্রস্থ করতে হয়েছে। বন্ধুরা জানান, আপনি একদিন একটু ভালোবেসে বন্ধু করেছেন তো বিনিময়ে আপনিও হয়েছেন বন্ধু ও একাত্মা। জামজামি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামজুড়ে অন্তত ৪ হাজার নিয়মিত বন্ধু রয়েছে তার। জামজামি ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড ঘোষবিলা গ্রামের মৃত ডা. মজনুর রহমানের ছেলে নির্বাচিত রাজন আহমেদের টাকা খরচ হয়নি তেমন। মুদি দোকানে বেঁচাবিক্র শেষে বন্ধুরা তাকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে ঠেলে নিয়ে গেছে নির্বাচনী মাঠে ভোটারদের দোর-গোড়ায়। ভালোবেসে চিনে রেখেছেন সর্ব সাধারণ ও প্রাণপ্রিয় গ্রামবাসীকে। আশ্চর্য্য হলেও সত্য এ ব্যাপারে তাকে হতে হয়েছে তীব্র স্মরণ শক্তির অধিকারী। বিকলঙ্গ হলেও তিনি এ সমাজের বোঁঝা নয়। প্রতিবন্ধীরা ইচ্ছে করলে কিম্বা আমার আপনার অনুপ্রেরণা অথবা ভালোবাসার এক আধটু ছোঁয়ায় বিকশিত হয়ে বলতে পারে ‘আমরাও পারি।’ দু পায়ে চলায় অক্ষম রাজন হুইল চেয়ারে বসে দেশ বিদেশের শত মানুষের বিকাশে প্রদেয় নগদ টাকা। পৌঁছে দিয়ে চলেছে এ বাড়ি সে বাড়ির সঠিক গ্রাহকদের হাতে। অক্ষমতা নেই, বিরক্তি নেই, কোনো অপ্রাপ্তি নেই এ যুবক রাজনের। বন্ধু আছে শ শ হাজার হাজার। মূদি দোকানে বেচা বিক্রি, মোবাইলে ফ্লেক্সি অথবা বিকাশে টাকা আদান প্রদানে একনিষ্ঠতা রাজনৈতিক মাঠে অকপটে নিজের বক্তৃতা। আলমডাঙ্গার ঘোষবিলা গ্রামের একদা তুচ্ছ এ প্রতিবন্ধী যুবক রাজন আহমেদকে দিয়েছে যুদ্ধ জয়ের মতো ইউপি নির্বাচনে ব্যাপক জয়ের সফলতা। চুয়াডাঙ্গা জেলায় অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনে একমাত্র নির্বাচিত প্রতিবন্ধী জনপ্রতিনিধি মো. রাজন আহমেদ তার বাকি জীবন জনসেবায় উৎসর্গ করতে চাই।