সড়ক মৃত্যুপুরি : এটা কিসের খেসারত?

 

আপন জনপদটাকে আমরা সকলে মিলেই যেন ঘিঞ্জি ও জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছি, তুলছি। যদিও প্রয়োজনের তাগিদেই প্রাকৃতিক নৈস্বর্গ বিলীন করে গড়ে তুলতে হচ্ছে কংক্রিটের আগান-বাগান। তারপরও যদি একটু বিধি-বিধান মেনে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দায়িত্বশীল হওয়া যায় তাহলে অবশ্যই অতোটা ভয়ঙ্কর হতো না, যতোটা হয়ে না হলে পথে বের হয়ে সুহালে ফেরার ন্যূনতম নিশ্চয়তা থাকতো।

শুধু চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহেই নয়, সারাদেশরই সড়ক এখন এক ভয়ঙ্কর রাক্ষুসি। চোখের পলকে পঙ্গু হচ্ছে পুরো পরিবার। গোষ্ঠীশুদ্ধ নিবংশ হতে বাকি থাকছে না। প্রতিদিনই পিচঢালা রাজপথ রক্তে লাল হয়ে উঠছে। অথচ টনক নড়ছে না। নড়বেই বা কীভাবে? অন্যায় আবদার, বেআইনি চলা মেনে নিতে নিতে এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গেছি আমরা, দীর্ঘশ্বাসই যেন সান্ত্বনা। অথচ এই আমরা আমাদের সভ্যসমাজ বলে দাবি করি। নিজেরা নিজেদের বাড়ির আশপাশ কীভাবে নোংড়া করছি! শহরের রাস্তা নোংড়া করার যেন অঘোষিত প্রতিযোযগতা চলছে। ভালো মন্দের বিচার? নির্দেশনার যথেষ্ট অভাব আছে বলেই বোধ হয় আমজনতার অতো দীর্ঘশ্বাস।

রাস্তা সরু হলেও তার দু ধারে সড়ক জনপথ বিভাগ অনেক বেশি করে অধিগ্রহণ করেছে সেই কবে, তখনকার দায়িত্বশীলদের দূরদর্শিতা ছিলো বলেই এটা করা হয়েছে। অথচ সেই জমি বেমালুম গিলে খেয়ে সড়কটাকেই করে তুলেছি মৃত্যুপুরি। অবাক হলেও সত্য যে, সড়ক ও সড়ক নিরাপদ রাখার জন্য অধিগ্রহণ করা জমিতে ধর্মীয় উপসানালয় গড়তেও ন্যূনতম দ্বিধা করছি না। অথচ ধর্মীয় অনুশাসনও সেটা সমর্থন করে না। তা নিয়ে আমরা কেউই কিছুই বলছি না। অবৈধ স্থাপনা কোনোদিনই অলৌকিকভাবে স্থাপিত হয়নি, আগে কাঠের দোকানঘর আড়ালে তৈরি করে রাতের অন্ধকারে রাস্তার পাশে রাস্তার জমিতে রেখে ব্যবসা করতেন। এখন? অতোটুকুও আড়াল করার দরকার হয় না, প্রকাশ্যেই রাজমিস্ত্রি লাগিয়ে ইট-সিমেন্ট দিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করলেও কেউ কিছু বলে না। অবশ্য মাঝে মাঝে উচ্ছেদ অভিযানে কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি বাড়ে। পুনর্বাসনের দাবিও মুখ থুবড়ে পড়ে। এসব যেমন রেওয়াজে রূপান্তর হয়েছে, তেমনই সড়ক হয়েছে আমাদের সকলের জন্যই মৃত্যুপুরি।

ঘরে বাইরে সর্বক্ষেত্রেই শুধু নিজেরটা ভাবলে নিরাপদ থাকা যায় না। সমাজটাকেই নিরাপদ করার মতো নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল হতে হয়। দায়িত্বশীলতা মানে রাজপথে গতিরোধক দেয়া বা গতিরোধক দেয়ার দাবি তোলা নয়। রাজপথ রক্তাক্ত মুক্ত রাখতে হলে অবশ্যই সকলকে আইন মানতে হবে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অনমনীয় হতে হবে। বিশেষ করে উপসড়কের মুখের স্থাপনা উচ্ছেদ জরুরি। কেননা, ওই অবৈধ স্থাপনার কারণেই উপসড়ক থেকে আসা ছোট-বড় যান রাজপথের চলমান যানের চালক দেখতে না পেলে প্রাণহানি অনিবার্য হয়ে ওঠে। যেমনটি হয়েছে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের ভালাইপুর বাজার মোড়ে।

সকলেই ভালোটা বুঝি, উপলব্ধি বোধ আর যাই হোক আমজনতার কম নেই। এরপরও যখন সামাজিক জীব মানুষ সুন্দর সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখলেও সমাজের মানুষেরাই সে পথ রুদ্ধ করে। কেন? অবশ্যই অভাব আদর্শ নির্দেশনার। বস্তা বস্তা টাকা করায়ত্ব করতে কর্তার অন্ধত্ববরণ বা স্বস্তা বাহবা কুড়োতে নেতার আইন অবজ্ঞাকারীদের পক্ষাবোলম্বোনের খেসারত আখেরে সমাজকেই দিতে হয়। আমরা কি সেই খেসারত দিচ্ছি?

পুনশ্চ: জনসংখ্যা বিস্ফোরণের দায়ও নিশ্চয় রাজনৈতিক নির্দেশনার ওপরই বর্তায়।