ঘটনাস্থল থেকে ফিরে আলম আশরাফ/জিয়াউর রহমান জিয়া: সংবাদ সম্মেলন করে সোহানকে সুহালে ফেরত দেয়ার আকুতি জানিয়েছিলেন তার মাতা-পিতাসহ আপনজনেরা। সেই অকুতি কাজে লাগেনি। অবশেষে সোহানের গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ইশ্বরবা জামতলা এলাকা থেকে ১০ দিন আগে তাকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়। এরপর থেকেই সন্ধান মেলেনি তার। গতকাল বুধবার চুয়াডাঙ্গার খাড়াগোদা গ্রামের চান্নাতলার মাঠ থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।
সোহান কালীগঞ্জ ইশ্বরবা গ্রামের মহাসিন আলীর ছেলে। সে কালীগঞ্জ শহীদ নূর আলী কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলো। দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত করা হয়। পরে মৃতদেহ নেয়া হয় তার নিজ গ্রামে। গতকালই দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, সোহানুর রহমান সোহানের (১৭) বামচোখে গুলিবিদ্ধ লাশ খাড়াগোদা চান্নাতলার মাঠে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। সেই খবরের ভিত্তিতে লাশ উদ্ধার করি। এ সময় সময় লাশের পরনে লুঙ্গি, কালো রঙের টি-শার্ট ও পায়ে খাকি রঙের চামড়ার স্যান্ডেল ছিলো। কে বা কারা কী কারণে তাকে হত্যা করে ওই মাঠে ফেলে রেখেছে তা তদন্ত না করে কিছু বলা যাবে না।
চুয়াডাঙ্গা নবীননগর গ্রামের রেজাউল করিমের ছেলে নিহত কলেজছাত্র সোহানুর রহমান সোহানের খালাতো ভগ্নিপতি ফারুক লাশ শনাক্তের সময় সাংবাদিকদের জানান, ১০ এপ্রিল ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ইশ্বরবা জামতলা এলাকা থেকে বেলা ৫টার দিকে সোহানকে সশস্ত্র চারজন শাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ইজিবাইকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান পায়নি তার পরিবার। সোহানের সন্ধান না পেয়ে তার বাবা কাপড়ব্যবসায়ী মহসিন কালীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
সোহানুরের খালাতো ভাই আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত ১০ এপ্রিল বিকেল ৫টার দিকে ঈশ্বরা জামতলা নামক স্থানে তার মায়ের জন্য অপেক্ষা করছিলো সোহানুর। সেখান থেকে তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায় ওরা। সোহানুর রহমানের মা পারভীনা বেগম বলেছিলেন, তার ছেলে সোহান কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো না। সে পড়ালেখা করে। এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৩১ পেয়েছে। এরপর কালীগঞ্জ শহরের শহীদ নূর আলী কলেজে ভর্তি হয়েছে। তিনি আরও জানান, সোহানুর রহমানের বাবা ঢাকায় থাকেন। তার দু ছেলে এক মেয়ে। সোহানুরের সন্ধান দাবিতে গত ১৭ এপ্রিল ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন সোহানুরের আপনজনেরা। সংবাদ সম্মেলনে সোহানুরের বাবা বলেছিলেন, আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। ছেলের সন্ধানে রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়ে আমি ক্লান্ত। সবাই আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে। সোহানের মা অসুস্থ। ছেলের শোকে আরো অসুস্থ হয়ে পেড়েছে।
এদিকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, সোহান নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই তার কাছে পরিবারটির পক্ষ থেকে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছি। এ নিয়ে গত এক মাসে ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জের বিভিন্ন গ্রাম থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তিনজন কলেজছাত্রকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর সবারই গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেছে। এর আগে গত ১৮ মার্চ দুপুরে চাপালী গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে যশোর এমএম কলেজের অনার্সের ছাত্র আবুজার গিফারীকে (২২) ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ২৪ মার্চ বিকেলে একই উপজেলার বাকুলিয়া গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের অনার্সের ছাত্র শামীম হোসেনকে (২০) তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর গত ১২ এপ্রিল দুজনেরই গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেছে।