একটা সমাজ কেমন আছে, সমাজের মনুষ কতোটা সুস্থ তা ওই সমাজের স্বাস্থ্য প্রশাসনের কর্তব্যপরায়ণতা পর্যবেক্ষণেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। চুয়াডাঙ্গা জেলার স্বাস্থ্য প্রশাসনের কর্তব্যপরায়ণতা দেখতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার দরকার নেই, সদর হাসপাতালের চেহারা দেখলেই বুঝতে বাকি থাকবে না কিছু। শুধু উপলব্ধি বোধটায় একটু শাণ দিয়ে নিতে হবে।
হাসপাতালে রোগী দেখতে ঢুকবেন? নাকে কাপড়ই শুধু দিতে হয় না, অনেকে হাতে করে লেবুর পাতাও আনেন। ওটা তাদের নাকের কাছে না ধরলে গা গুলিয়ে বমি আসে। আর গরমে গরমজনিত রোগে অসুস্থ হয়েছেন তো নির্ঘাত কপাল পুড়েছে আপনার। হাসপাতালের ৬ ওয়ার্ডের ৬০টি বৈদ্যুতিক পাখার মধ্যে ৪৮টা ঝুলানো অবস্থায় পাওয়া গেলেও ওসবের অর্ধেকের বেশিতেই প্রত্যাশিত বাতাস মেলে না। অথচ গরমে হাসপাতালে গরমজনিত রোগেই আক্রান্ত হয়ে হরদম হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
অবশ্যই হাসপাতালে কাকে কখন কী অবস্থায় যেতে হয় তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আগাম বলা মুশকিল। ফলে যারা জনপ্রতিনিধি, জনগণের সেবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে দায়িত্বগ্রহণ করেছেন তাদের একটু এদিকে বেশি বেশি করেই নজর দেয়া উচিত। বিধি মোতাবেক জেলার শীর্ষ জনপ্রতিনিধিই হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির বড় কর্তা। তদারকিতে অনেক কিছুই হয়, হয়েছেও। যেমন ডায়নামা থাকলেও তা তেলের অভাবে চলতো না, এখন চলে। চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় লোকবলের সঙ্কট কাটাতে ঊর্ধ্বতন কার্যালয়ে তদবিরের নজিরও রয়েছে। এরপরও হাসপাতালের বেহাল দশা কাটছে না কেন?
যুক্তি যতোই থাকুক, অপ্রতুলতা কাটাতে দায়িত্বশীলদের আরো কর্তব্যপরায়ণতাই কাম্য। জেলার সদর আধুনিক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মেডিকেল অফিসার পদ নেই। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদগুলোর অধিকাংশই শূন্য। গাইনি কনসালটেন্ট থাকেন না হাসপাতাল কোয়ার্টারে। শুধু নেই নেই যেন লেগেই থাকে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা প্রসঙ্গটি সামনে এলেই বাড়তি চাপ আর রোগীসহ রোগীর লোকজনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা প্রসঙ্গটি সামনে আসে। বিষয়টি প্রাসঙ্গিক হলেও ওই অজুহাত এড়ানোর দায় কি দায়িত্বশীলদের নয়?
দেশের প্রত্যেক নাগরিকের সুচিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এ অধিকার সাংবিধানিক। সরকার সুচিকিৎসা সর্বস্তরে পৌঁছে দিতে নানামুখী উদ্যোগও নিয়েছে। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বসেই দেশের বড় বড় চিকিৎসকের সাথে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসা নেয়া যায়। ওষুধও বরাদ্দে বর্তমান সরকারের কমতি নেই। অথচ চুয়াডাঙ্গা সদর আধুনিক হাসপাতালে নানা সমস্যা যেন লেগেই রয়েছে। বৈদ্যুতিক পাখাগুলো পুরোনো, ৬০টির মধ্যে অর্ধেকই অচল। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বসানো লোহার খাঁচাগুলো থাকলেও তার অধিকাংশেই যার জন্য খাঁচা সেটাই নেই। কোথায়?
অবশ্যই সরকারি স্বাস্থ্য সেবাদান কেন্দ্রের স্বাস্থ্য সেবার মান বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্য প্রশাসনের আন্তরিকতা দরকার। প্রয়োজন স্বচ্ছতার সাথে জবাবদিহিতা। এসব বিধি-বিধান কিতাবে থাকলেও বাস্তবায়নে ঘাটতি। অথচ স্বাস্থ্য বিভাগে সুশাসন, সুহাল অতীব জরুরি।