বোনের মৃতদেহ দেখতে যাওয়ার পথে চোখের পলকে পঙ্গু জাহান আলীর পুরো পরিবার

 

স্টাফ রিপোর্টার: দুর্ঘটনায় তছনছ হয়ে গেছে দামুড়হুদা দলকা লক্ষ্মীপুরের আলমসাধুচালক রফিকুলের পরিবার। তার মা ও এক ভাগ্নে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। পিতা ও বোনসহ আরো এক ভাগ্নিও গুরুতর জখম অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের বিছনায়। এছাড়াও পরিবারটির নিকটাত্মীয় স্বজনদের মধ্যে ৬ জন আহত হযেছে। একই সময় একই নৈশকোচের ধাক্কায় পাখিভ্যান গুঁড়িয়ে গেছে। চালক দৌলাতদিয়াড় মাঝেরপাড়ার কালুকে ভর্তি করতে হয়েছে হাসপাতালে।

গতকাল সোমবার রাত সোয়া ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের ভালাইপুর মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে সুকিরন নেছার ডান পা কেটে বাদ দিতে হয়েছে। অপর পাও কেটে বাদ দেয়ার অবস্থায় তাকে ও তার নাতি ৪ বছরের শিশু তানবীনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। শিশু তানবীনের মা নারগিসকেও রাজশাহী মেডিকেলে রেফার করা হয়েছে। তবে গতরাতে তাকে রাজশাহী নেয়া সম্ভব হয়নি। তিনি দামুড়হুদা ছুটিপুরের প্রবাসী শেরেগুলের স্ত্রী।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার জুড়ানপুর ইউনিয়নের দলকালক্ষ্মীপুরের জাহান আলীর বোনের বাড়ি ডিঙ্গেদহে। গতকাল বোন মারা গেছে খবর পেয়ে তিনি তার ছেলের আলমসাধুযোগে স্ত্রী, মেয়ে, নাতি, চাচাতো ভাই, ভায়ের স্ত্রী সন্তানসহ মোট ১৩ জন বোনের মৃতদেহ শেষবারের মতো দেখার জন্য ডিঙ্গেদহের উদ্দেশে রওনা হন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ি থেকে রওনা হয়ে সোয়া ৯টার দিকে ভালাইপুর মোড়ে দুর্ঘটনায় জাহান আলীসহ করিমনচালক তার ছেলে রফিকুল ইসলামসহ প্রায় সকলেই আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। দুর্ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আহতরা বলেছেন, আলমসাধু কলাবাড়ি-রামনগর মোড় পার হয়ে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের ভালাইপুর মোড়ে উঠতেই চুয়াডাঙ্গা অভিমুখের নৈশকোচ চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স ধাক্কা দেয়। নৈশকোচের ধাক্কায় আলমসাধু উল্টে পড়ে। একই সময় অপরদিকে থাকা ব্যটারিচালিত ভ্যান (পাখি ভ্যান নামে পরিচিত) ধাক্কা দিলে ভ্যানটি গুঁড়িয়ে যায়। চালক কালু (৩০) আছড়ে পড়ে আহত হন। তাকেও উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়। ঢাকাগামী নৈশকোচটি গতরাত সাড়ে ৮টার দিকে মুজিবননগর থেকে মেহেরপুর হয়ে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে রওনা হয়ে ভালাইপুর মোড়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। অবশ্য নৈশকোচের কোনো যাত্রীর ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি।

আহতদের মধ্যে দলকালক্ষ্মীপুরের মৃত রহিম বকশর ছেলে জাহান আলী (৬০), তার স্ত্রী সুকিরন নেছা (৫০), মেয়ে নারগিস খাতুন (৩০), নারগিসের দু শিশুকন্যা তানবীন (৪) ও তামান্না (৭), আলমসাধুচালক রফিকুল ইসলাম, জাহান আলীর ভাই গনা আলী (৫০), গনা আলী স্ত্রী মরিয়ম খাতুন (৪৫), ছেলে ইনামুল (২৪), জান আলীর বোন সেলিনা খাতুন (৩৫), ঠাণ্ডুর স্ত্রী ভিলা খাতুন, আফছার জোয়ার্দ্দারের ছেলে আসমান জোয়ার্দ্দার (৬৫)। পাখিভ্যানের চালক কালু দৌলাতদিয়াড় মাঝেরপড়ার আলী আকবরের ছেলে। এদেরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সুকিরন নেছার দুটি পাই গুঁড়িয়ে গেছে। সাথে সাথে ডান পা শরীর থেকে কেটে বাদ দিতে হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ও তার মেয়ে নারগিস এবং নারগিসের মেয়ে তানবীনকে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মশিউর রহমান। একই পরিবারের সকলেই আহত হওয়ার খবর পেয়ে গ্রাম থেকে দলে দলে নারী-পুরুষ হাসপাতালে দেখতে আসেন। তারাই তড়িঘড়ি করে যে যার মতো আর্থিক সহযোগিতা করে একটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেন। একটি অ্যাম্বুলেন্সে তিনজনকে নেয়া সম্ভব না হওয়ায় নানি সুকিরন ও নাতি তানবীনকে নেয়া হয়। নারগিসছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসা চলছে। নাতিকে বহন করা অ্যাম্বুলেন্স গতরাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ছিলো রাজশাহীর পথে।