পয়লা বোশেখে ইলিশ পান্তার রেওয়াজ এবং

 

পয়লা বোশেখে পান্তা ইলিশ খেতেই হবে? না খেলে কি সুচিকাটে না, নাকি পান্তা ইলিশ সৌভাগ্যের দ্বারখোলে? ওসব কিছু না হলেও রেওয়াজটা নিজস্ব সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পয়লা বোশেখ তথা বঙ্গাবব্দ বরণ এমনই এক উৎসবে রূপ নিয়েছে যে উৎসব সকল ধর্ম-বর্ণকে একাকার করে সকলকেই যেন ষলোআনা বাঙলি আনা করে তোলে। তারপরও ইলিশের দেশে যখন ইলিশের সংকট তখন তা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করেও কি বর্ষবরণ করা যায় না? প্রশ্নটি তখনই প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে যখন একটি ইলিশের দাম কয়েক হাজার টাকা হাকা হয়, আর ওই চড়া দরেই তা কেনার জন্য কেউ কেউ মেতে ওঠে।

পুরোন এবং পরিচিত একটি স্লোগান আছে, ‌‌‌‌কেউ খাবে কেউ খাবে না, তা হবে না তা হবে না। স্লোগানটি মূলত বঞ্চিতদেরই প্রাণের স্পন্দন। এ স্লোগানের মধ্যে লুকিয়ে আছে বৈষম্য দূর করে সাম্য প্রতিষ্ঠার তাগিদ। যদিও বাস্তবতার কঠিন সময়ের কষাঘাতে মানবিকতাও ক্ষতবিক্ষত, তবুও যা কিছু সংকট তা চড়ামূল্যে হলেও কিনে নিজের সন্তানের সামনে দেয়ার মানসিকতা ওদের থাকতেই হয়। ওরা কারা? সহজ কথায় যাদের উপরি বেহিসেবি আয় তারা। তা না হলে নিম্ন আয়ের ৫ সদস্যের একটি পরিবারের সারা মাসের বাজেটে দিয়ে কেউ কি একটি ইলিশ কিনতে মাতামাতি করে? নিজে খেলেই হয় না, প্রতিবেশী বা আশপাশের পরিবারগুলোর পরিস্থিতিটাও উপলব্ধি করতে হয়। যদিও কালো টাকার পাহাড়গড়া মানুষগুলোর বিবেক তথা ওই উপলিব্ধিবোধে নেমে আসে ধূসরতা। তা না হলে মাংসের চাহিদা পূরণে পড়শী দেশের সীমান্তে গিয়ে পাখির মতো করে কি দেশের নাগরিককে মরতে হয়? আর দুদিন পরই পয়লা বোশেখ। এরই মধ্যে ইলিশ নিয়ে যা শুরু হয়েছে তা হাস্যকরই শুধু নয়, হুচুকেদের আদিখ্যতাও। বন্ধ হওয়া দরকার।

অবশ্যই শুধু নিজেরটা বুঝলে হয় না, সমাজের তথা দেশের বাস্তবতাও উপলব্ধি করতে হয়। পয়লা বোশেখ যেহেতু কালক্রমে নিজস্ব সংস্কৃতির নিজস্ব উৎসবে রূপ নিয়েছে, এ উৎসবের রং যখন সকল বাঙালিকেই রাঙিয়ে নতুন একটি দিন উপহার দিচ্ছে তখন তা নিয়ে নাকসিটকানোর চেয়ে উৎসবকে সার্বজনীন করার লক্ষ্যে নিজের দায়িত্বটুকু নিজের অবস্থান থেকে পালন করাই শ্রেয়। ইলিশ যেহেতু সঙ্কট, সেহেতু সেদিকে না ঝুকে হুড়োহুড়ি না করে পান্তা পেঁয়াজ মরিচেই মেতে ওঠা কি দায়িত্বশীলতা নয়? এতে খরচ যেমন কমবে, তেমনই ইলিশের সঙ্কট কাটাতে ঝাটকা নিধনও বন্ধ হবে।