প্রশ্নটি প্রাসঙ্গিক, প্রভাষক হলেই কি তাকে তার স্ত্রীর হাতে নিগৃহীত হয়েও নীরবে সহ্য করতে হবে? সঙ্গত কারণেই পাল্টা প্রশ্ন আসতেই পারে, যে শিক্ষা একজনকে সহনশীল করতে পারে না, যে শিক্ষা আপন সংসারে শান্তি প্রতিষ্ঠার মতো আলো ছড়ায় না সেই শিক্ষায় শিক্ষিত কাউকে কি শিক্ষক হওয়া মানায়? না, ধৈর্য্য-সহ্য বলে একটি বিষয় আছে। কখন কখন দায়িত্বশীলদেরও ধৈর্য্যচ্যুত হতে দেখা যায়। যদিও একজন কলেজ শিক্ষককে যৌতুকের লোভে বা মোহে অন্ধ হওয়ার অভিযোগ সুষ্ঠু তদন্তের দাবি রাখে।
চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা মহাবিদ্যালয়ের একজন প্রভাষকের বিরুদ্ধে তার স্ত্রীকে মেরে রক্তাক্ত জখম করার অভিযোগ উঠেছে। স্ত্রীর ভাইকেও মেরে আহত করা হয়েছে। এ মর্মে থানায় নালিশও করেছেন নির্যাতিতা নারীর পিতা। তিনি কষ্টমাখা কণ্ঠে বলেছেন, বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের দাবিতে হাসিনা খাতুনকে নির্যাতন করে প্রভাষক জামাই শামীম। গতকাল এ বিষয়ে দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি নিশ্চয় শিক্ষিত সমাজকে হতবাক করেছে। নড়েচড়ে বসেছেন বিবেকবান অনেকে। কেননা, একজন কলেজ শিক্ষক মানে তিনি শিক্ষিত। প্রকৃত শিক্ষার জ্ঞানেই আলোকিত না হলে তিনি কি আর কলেজে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিয়ে আলোকিত মানুষ করার দায়িত্ব নিয়েছেন? অথচ তার বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে ধরে মেরে রক্তাক্ত জখম করার অভিযোগ উঠেছে। রক্তাক্ত আহত স্ত্রী ও শ্যালকের ছবিও পত্রস্থ হয়েছে। যেহেতু বিষয়টি থানা পর্যন্ত গড়িয়েছে, সেহেতু বিষয়টিকে আর পারিবারিক গণ্ডিবদ্ধ বলে দায় এড়ানো যায় না। স্ত্রীকে নির্যাতনকারী কলেজ শিক্ষকেরও যুক্তি থাকা অমূলক নয়। তিনি হয়তো বলবেন, ধৈর্য্য-সহ্যের সীমা লঙ্ঘনের কারণেই ওরকমটি হয়েছে। যদিও এ যুক্তি শুধু আইনের দৃষ্টিতেই নয়, সমাজের শাদা চোখেও খোড়া। কেননা, যে যতো বড় অন্যায়ই করুক না কেন, তাকে নির্যাতন করা যায় না। মনে রাখা দরকার, স্বামী-স্ত্রীর দৈহিক সম্পর্কের বিষয়টি সহজাত এবং জৈবিক চাহিদার অংশ হলেও উভয়ের চাহিদার প্রেক্ষিতে ছাড়া একে অপরকে ধর্ষণের এখতিয়ার নেই। অথচ একজন শাদা পোশাক পরা মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে স্ত্রীর ওপর আঘাত করেছেন, তাকে কি ছাড় দেয়া যায়? যে শিক্ষায় একজনকে শিক্ষিত করতে পারেনি, তাকে আইনের দৃষ্টিতে উপযুক্ত শাস্তি দিয়েই সুপথে রাখা দরকার। এটা সমাজের স্বার্থেই প্রয়োজন।
অবশ্যই যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সেই ব্যক্তির বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত হওয়া দরকার। শুধু পুলিশি তদন্ত নয়, তার কর্মস্থলের তরফেও তদন্ত হওয়া উচিত। কেননা, একজন কলেজ শিক্ষক হয়ে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। মনে রাখতে হবে, সমাজের শিক্ষকরাই মানুষ গড়ার কারিগর, সমাজের আদর্শ। অনুকরণীয়। ফলে সুন্দর সমাজ গঠনের স্বার্থে চকচকে পোশাক পরাদের সুপথে রাখতে উচিত শিক্ষা অনিবার্য।