মেহেরপুরের আশরাফপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলীর লাশ রাষ্ট্রীয় মর্যদায় দাফন

 

মেহেরপুর অফিস: মারণব্যাধি ক্যান্সারের সাথে লড়ে শেষ পর্যন্ত হেরে গেলেন মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী (৬৮)। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় তিনি মেহেরপুর সদর উপজেলার আমদহ ইউনিয়নের আশরাফপুর গ্রামের পূর্বপাড়াস্থ নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন (ইন্না………রাজেউন)। গতকাল বিকেল ৪টায় তার লাশ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গ্রাম্য কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী মৃত্যুকালে অসুস্থ বৃদ্ধ মা, এক ছেলে ও দুই মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বিকেলে তার লাশে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। পুলিশের একটি চৌকস দল মরহুমের বাড়ির পার্শ্বস্থ পাকড়তলায় তার লাশে গার্ড প্রদান করে। রাষ্ট্রের পক্ষে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহা. শাহীনুজ্জামান সালাম গ্রহণ করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বশির আহমেদ, ডেপুটি কমান্ডার আলতাফ হোসেন, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম, এসআই রবিউল ইসলাম প্রমুখ। পরে নামাজে জানাজা শেষে গ্রাম্য কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। তার দাফন অনুষ্ঠানে মরহুমের আত্মীয়স্বজন ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী ১৯৭১ সালে রেডিও-তে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুনে উদ্বুদ্ধ হন এবং মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মেহেরপুরের তদানীন্তন মহাকুমা প্রশাসক তৌফিক এলাহী চৌধুরীর সক্রিয় সহযোগিতায় এবং চুয়াডাঙ্গা ইপিআর’র বাঙালি অফিসার লে. এয়ার আযম চৌধুরীর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে ভারতের বেতাই ক্যাম্পে ভর্তি হন। পরে ভারতের বিহারে ট্রেনিং গ্রহণ করেন। ট্রেনিং শেষে দেশে ফিরে ৮ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর মঞ্জুরের অধীনে ইপিআর কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার আব্দুল মালেকের নেতৃত্বে কুষ্টিয়া এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ করেন। এছাড়া সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন মেহেরপুরের বাড়িবাঁকা, মুজিবনগরের মোনাখালী, চুয়াডাঙ্গার ডিঙ্গেদহসহ কয়েকটি স্থানে। মোনাখালীতে সম্মুখযুদ্ধের সময় তার বাম হাতে সেলের টুকরা বিদ্ধ হয়। ওই সময় তিনি পড়ে গেলে তার সামনের দুটি দাঁত ভেঙে যায়।

শেষ বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা ব্যয় যোগাড় করা তার পক্ষে দুষ্কর হয়ে পড়ে। তাই তিনি চিকিৎসা ভাতা’র জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তাই অর্থাভাবে চিকিৎসা নিতে না পেরে মারণব্যাধি ক্যান্সারের কাছে তিনি হেরে যান।