দর্শনার সেই ভবনে এবার সিমেন্টে মাটি মেশানোর অভিযোগ

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ ল্যাব ও অফিস ভবন নির্মাণের ঘটনায় একের পর এক অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে আসছে। রডের বদলে বাঁশ ব্যবহারের পর এবার  সেই ভবনে নির্মাণ কাজে সিমেন্টের সাথে মাটি ও খোয়ার সাথে রাবিশ মেশানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, অত্যন্ত নিম্নমানের ইট ও বালু দিয়ে কাজ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পরিষদ প্রশাসক। আজ সোমবার কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিশেষ টিম ভবনটি পরিদর্শনে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

এলাকাবাসী জানান, গতকাল রোববার ভবনটির দ্বিতীয় তলার ছাদের ওপরের একটি পিলার ভাঙার পর সিমেন্ট ও বালুর সাথে মাটি মিশিয়ে ঢালাই করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। খোয়ার মধ্যেও রাবিশের পরিমাণ বেশি দেখা গেছে। তদন্ত কমিটি ও প্রশাসনের লোকজনের উপস্থিতিতে পিলারটি ভাঙা হয়। তাছাড়া ভবনের সামনে যেসব ইট ব্যবহারের উদ্দেশে রাখা হয়েছে তা অত্যন্ত পুরাতন ও নিম্নমানের। দেখে মনে হয় যেন ইটগুলো কোথাও থেকে কুড়িয়ে আনা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মনজু জানান, ভবনে যেসব ইট, বালু, সিমেন্ট ও রড ব্যবহার করা হয়েছে তা সবই নিম্নমানের। এছাড়া পিলার ঢালাইয়ে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করে দুর্নীতির নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে কাজ দেখভালে নিয়োজিত থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুব্রত বিশ্বাস এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার জেমস কষ্টাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান সৌমেন সাহা জানান, আমরা ভবনের বিভিন্ন অংশ ভেঙে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তদন্ত কাজ শেষ হলে ৩ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট অধিদফতরে রিপোর্ট জমা দেয়া হবে।

এদিকে ভবনটি নির্মাণে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর সমালোচনার মুখে পড়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আমরা যে সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছি, এটা তারই নমুনা। ওই ভবনটির নির্মাণ কাজ করছে স্থানীয় খামারবাড়ি এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা মনি সিং এর প্রতিষ্ঠান ‘জয় ইন্টারন্যাশনাল’। এই প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে যেসব ভবন নির্মাণ করেছে, তার মান ঠিক ছিলো কি-না তা যাচাই করার দাবি জানিয়েছেন তারা।  এছাড়া  ভবনটির গুণগত মান দেখার দায়িত্বে ছিলো ইসিএল নামের একটি প্রতিষ্ঠান, যাদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই রয়েছে নানা অভিযোগ। এতো অভিযোগ থাকার পরও ইসিএল কীভাবে কাজটি পেলো তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, রডের বদলে বাঁশ দিয়ে ভবন নির্মাণের বিষয়টিতে কৃষি বিভাগের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। কোনোভাবেই দোষীর ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত ও প্রকল্পের প্রকিউরমেন্ট কনসালটেন্টকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হতে পারে বলে তিনি জানান।

সিন্ডিকেটের খপ্পরে খামারবাড়ি: রাজধানীর খামারবাড়িতে অবস্থিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অধীনে ৩০টি প্রকল্প রয়েছে। এর একটি প্রকল্প দর্শনার সেই নির্মাণাধীন ভবন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, হাজার কোটি টাকার এসব প্রকল্পের দরপত্র ও কোটেশনের সময় প্রভাব বিস্তার করে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট। কোনো কোনো প্রকল্প পরিচালক এই সিন্ডিকেটের সদস্য হয়ে সমঝোতার ভিত্তিতে কাজ করছেন। ফলে কাজের মান ভালো হলো কি-না তা কেউ দেখে না।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আশপাশের এলাকার সরকার দলীয় কয়েকজন নেতা পুরো খামারবাড়ির বিভিন্ন দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করেন। ফলে দেশের যে এলাকারই কাজ হোক না কেন তারাই কাজটি পেয়ে যান। এরপর স্থানীয় নেতাদের কাছে কাজটি বিক্রি করে দেন। প্রকল্প কর্মকর্তারা বিষয়টি জানলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে সাহস পান না, আবার কেউ কেউ উপঢৌকন নেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকল্প কর্মকর্তা বলেন, ওই সিন্ডিকেটের কাছে আমরা জিম্মি। কাজ না দিলে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়া হয়। ক্ষমতাসীন দলের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সাথে তাদের যোগসাজস থাকার কারণে আমরা অসহায়।