আলমডাঙ্গা ব্যুরো: বৃহত্তর কুষ্টিয়ার কিংবদন্তিতুল্য মুক্তিযোদ্ধা, আলমডাঙ্গা থানা মুজিব বাহিনির কমান্ডার কাজী কামালের গতকাল ৮ এপ্রিল ছিলো ১ম মৃত্যুবার্ষিকী। একেবারে নীরবে অতিবাহিত হলো খ্যাতিমান এ মুক্তিযোদ্ধার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। শুধু পারিবারিক আয়োজনে এ মহান মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছিলো মিলাত মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠানের। তিনি ৭২ বছর বয়সে ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল ঢাকা ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। দোয়া মাহফিলে স্থানীয় লোকজন, মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। বাবুপাড়া জামে মসজিদের ইমাম দোয়া পরিচালনা করেন।
উল্লেখ্য, বৃহত্তর কুষ্টিয়ায় মুক্তিযোদ্ধার কথা মনে হলে সর্বাগ্রে যার নাম স্মরণ করেন মানুষ, তিনি আর কেউ নন, আলমডাঙ্গার কাজী কামাল। আলমডাঙ্গা উপজেলার পার্শ্ববর্তী মিরপুর উপজেলার সুতাইল গ্রামের মৃত কাজী সিরাজুল ইসলামের ছেলে কাজী কামাল। তিনি যেন বাঙালির সহজ সোজা দামাল ছেলের চিরন্তন প্রতীক ছিলেন। ‘৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে সুমহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তিনি। তিনি আলমডাঙ্গা থানা মুজিব বাহিনির কমান্ডারের গুরু দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ‘৬৫ সালে পাক ভারত যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন একজন খাঁটি দেশ প্রেমিক হিসেবে। ‘৬৬ সালের গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ‘৭০ সালে নিজ উদ্যোগে এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করে গড়ে তোলেন বিশাল বাহিনি। আব্দুল হান্নান, আশু, মজিবর রহমান, মঈনুদ্দীনসহ প্রথিতযশা বহু ছাত্রনেতা তার নেতৃত্বে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলো। তার শিষ্য বলে নিজের পরিচয় দিতে ভালবাসেন এমন একাধিক মুক্তিযোদ্ধা বলেন- আলমডাঙ্গা রেলস্টেশন থেকে পুলিশের রাইফেল কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। নিজ বাড়িতে রাইফেল ট্রেনিং দিতেন। এ সব যুদ্ধের প্রারম্ভের কথা। তারপর যখন যুদ্ধের ডামাডোল বেজে উঠলো তখন তৎকালীন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শাফায়েত-উল ইসলাম, ডা. শাহাবুদ্দিনসহ অনেককেই সাথে নিয়ে আলমডাঙ্গা কলেজে কন্ট্রোল রুম তৈরি করেছিলেন। তার অমিত বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্বে আলমডাঙ্গা থানার সমস্ত রাইফেল লুট করে স্বেচ্ছাসেবকদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া হয়। এ সময় কামাল বাহিনির শক্তি ও সাহস এতো বেশি হয়ে পড়ে যে তারা মেজর আবু ওসমান চৌধুরী ও ইপিআর বাহিনীসহ কুষ্টিয়াকে পাক হানাদার মুক্ত করতে মরণপণ যুদ্ধ করেন। আরও ভালো প্রশিক্ষণের জন্য তিনি ভারতে চলে গেলেন সদলবলে। সেখানে ট্রেইনিং শেষে দেরাদুনে যান উচ্চ প্রশিক্ষণে। পাহাড়ী অঞ্চলে জীবনবাজি রেখে উচ্চ প্রশিক্ষণ শেষ করেন। পরে দেশে ফিরে যে সকল মুক্তিযোদ্ধা যারা ভারতে যেতে সক্ষম হয়নি তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে অনুপ্রাণিত করতেন। বিস্ময়কর কাকিলাদহ’র ভয়াবহ যুদ্ধে তিনি কমান্ডিং’র দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় তিনি পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। ব্যক্তি জীবনে তিনি অত্যন্ত সহজ সরল জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে তার ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক ছিলো। তিনি কাজী কামালকে তৎকালীন থানা গভর্ণর করেছিলেন। স্বাধীনতার পর কুমারী ইউনিয়নের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। তবে সব মিলিয়ে মানুষ তাকে মনে রাখবেন- একজন নির্লোভ ও অমিত তেজস্বী আত্মত্যাগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে।