গাংনীর ৯টি ইউপিতে ৪৮৬ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল : বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি

 

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের সবকটিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীদের ছড়াছড়ি। উভয় দল থেকে একজন করে দলীয় টিকিট পেলেও বিদ্রোহী প্রার্থীরা হাল ছাড়েননি। তবে বিদ্রোহী প্রার্থীর তালিকায় বিএনপির চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা। চুতর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত নয়টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ৫১ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৩৪১ জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৯৪ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

গত কয়েকদিন ধরে মনোনয়নপত্র দাখিল করছেন প্রার্থীরা। এসবের ভিড়ে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করেছেন প্রায় সকল প্রার্থী। বিভিন্ন যানবাহন শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে প্রার্থীরা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। সমর্থকদের দেয়া হয়েছে নানা ধরনের খাবার। তাও আবার উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণেই। কয়েকজন প্রার্থীর সমর্থকদের মিছিল করতেই দেখা গেছে। এতোকিছুর পরেও আচরণ বিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে কর্ণপাত করেননি রিটার্নিং অফিসারবৃন্দ কিংবা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। ফলে নির্বাচনী মাঠে আচরণ বিধি লঙ্ঘনের মধ্যদিয়ে এক বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কয়েকজন প্রার্থী। উপজেলা পরিষদ চত্বরে আচরণবিধি লঙ্ঘনের এ ধরনের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন অনেকেই।

গতকাল বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে বেশির ভাগ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এ কারণে অন্য দিনের তুলনায় গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলা পরিষদ চত্বরে পা ফেলার জায়গা ছিলো না বললেই চলে। শেষ দিনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কয়েকজন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। বাকি প্রার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন দিনে দাখিল করেছেন।

বামন্দী ইউপি চেয়্যারম্যান পদে আ.লীগ প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বিশ্বাস, বর্তমান চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল আওয়াল, বিএনপি প্রার্থী আমিরুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী হবিবুর রহমান হবি ও জাহাঙ্গীর আলম। তেঁতুলবাড়ীয়া ইউপিতে বর্তমান চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজমুল হুদা, আ.লীগ প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন, বিএনপি প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুস সাত্তার, আব্দুল মালেক ও আমিরুল ইসলাম। কাজিপুর ইউপিতে বর্তমান চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা আলম হোসেন, আ.লীগ প্রার্থী আবু নাতেক, বিএনপি প্রার্থী রাহাতুল্লাহ, স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল আলিম, হাফিজুর রহমান, জমির উদ্দীন, নাজিম উদ্দীন, আব্দুর রউফ, মুঞ্জুর হোসেন টকি ও আবুল কালাম। ষোলটাকা ইউপিতে বর্তমান চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী আয়ুব আলী, আ.লীগ প্রার্থী আমিনুল ইসলাম দেলবার, বিএনপি প্রার্থী মনিরুজ্জামান, স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুজ্জামান, আব্দুল কুদ্দুস, কামরুল ইসলাম ও আল হেলাল। রাইপুর ইউপিতে বিএনপি প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আলফাজ উদ্দীন কালু, আ.লীগ প্রার্থী গোলাম সাকলায়েন ছেপু, স্বতন্ত্র প্রার্থী ইসমাইল হোসেন, আব্দুর রব ও ফারুক হোসেন। কাথুলী ইউপিতে আ.লীগ প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান রানা, বিএনপি প্রার্থী জিহাদ আলী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শিহাব উদ্দীন। মটমুড়া ইউপিতে আ.লীগ প্রার্থী আবুল হাসেম, স্বতন্ত্র প্রার্থী সোহেল আহম্মেদ, মনিরুজ্জামান আতু ও মাসুদ পারভেজ এবং বিএনপি প্রার্থী হামিদুল হক। ধানখোলা ইউপিতে বর্তমান চেয়ারম্যান আ.লীগ প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক, বিএনপি প্রার্থী আখেরুজ্জামান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মশিউর রহমান সাবান, শওকত আলী, গোলাম সরওয়ার ও তারিকুল ইসলাম। সাহারবাটি ইউপিতে আ.লীগ প্রার্থী গোলাম ফারুক, বিএনপি প্রার্থী বাসীরুল আজিজ, স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল ইসলাম ও ছানারুল ইসলাম মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা এমপি সেলিনা আখতার বানু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক, গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকন, গাংনী পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সবুক্তগীন মাহমুদ পলাশসহ নেতৃবৃন্দ।

দলীয় গ্রুপিং, জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের মনোনয়ন ও যোগ্য প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় বিদ্রোহীর ছড়াছড়ি বলে জানান উভয় দলের কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থী। এলাকার সমর্থকদের চাপে তারা প্রার্থী হতে বাধ্য হয়েছেন বলে দাবি করেন। তবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি করলেন গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকন। তবে দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে বিদ্রোহীরা মনোনয়পত্র প্রত্যাহার করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিএনপিরও কঠোর অবস্থান রয়েছে বলে জানান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু।

এদিকে স্বতন্ত্র ব্যানারে মনোনয়নপত্র দাখিলকারীদের কয়েকজন মূল প্রার্থীর বিকল্প হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের কারও যদি কোনো কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল হয় সেক্ষেত্রে বিকল্প প্রার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। চতুর্থ ধাপে আগামী ৭ মে এ উপজেলার ৯টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।