স্থবিরতায় আটকে আছে গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহের কাজ

 

স্টাফ রিপোর্টার: মেহেরপুর এলজিইডির কাজকর্মে বিরাজ করছে স্থবিরতা। আটকে রয়েছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। নবাগত নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে অধীনস্থদের সমন্বয়হীনতা চলছে। এর জন্য অবশ্য নির্বাহী প্রকৌশলীর ইচ্ছেমতো অফিসে যাওয়া আসা ও কয়েকজন ঠিকাদারের সাথে গোপন সম্পর্কের জেরকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা।

মেহেরপুর সদর, মুজিবনগর ও গাংনী উপজেলার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়। নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে রাস্তা কাজ করায় স্থানীয় প্রকৌশলীরা রাস্তার কাজ বন্ধ করতে চিঠি দেন ঠিকাদারদের। কিন্তু এতে বাধ সাধেন নির্বাহী প্রকৌশলী। ঠিকাদারদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে তিনি ওইসব সড়কে কাজ চালু করতে প্রকৌশলীদের অনৈতিক চাপ দিতে থাকেন। প্রকৌশলীরা এতে রাজি না হলে রাস্তার কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। দরপত্রের চুক্তিমতো উপকরণ নিশ্চিত না হলে রাস্তার কাজ চালু করা হবে না এমন সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন প্রকৌশলীরা। যথাযথ উপকরণ দিয়ে দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদ দিচ্ছেন উপজেলা প্রকৌশলীরা। কিন্তু ওইসব ঠিকাদাররা নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে গোপন আঁতাতের কারণে কাজ শেষ করছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে দুর্ভোগ নেমে এসেছে ওইসব সড়ক দিয়ে চলাচলকারীদের জীবনে।

মুজিবনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ চলছে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে। স্থানীয় প্রকৌশলী ঠিকাদারকে নির্দেশ দিয়েছেন ভালোভাবে কাজ করতে। ঠিকাদার নির্বাহী প্রকৌশলীকে নালিশ দিলে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের ধামকি দেন। কাজ ভালো হচ্ছে মর্মে সনদ নিতে তিনি উপজেলা প্রকৌশলীকে চাপ দিচ্ছেন।

গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন আজিম উদ্দীন সরদার। যোগদানের পর থেকে তিনি জেলার বেশ কয়েকজন ঠিকাদারের সাথে গোপন বৈঠক করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে কয়েকজন ঠিকাদারের কাছ থেকে অগ্রিম ঘুষ গ্রহণ করেন। ওইসব ঠিকাদারদের কয়েকটি কাজ শুরু হলে প্রত্যেকের কাছ থেকে আরো ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করেন। এভাবে কয়েক দফায় ঠিকাদারা টাকা দিতে গিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। কয়েকজন ঠিকাদার বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করলেও ঠিকাদারি কাজের স্বার্থে নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিতে পারছেন না।

নির্বাহী প্রকৌশলী আজিম উদ্দীন সরদার নিজেকে গোপালগঞ্জের লোক পরিচয় দিয়ে তার অধীনস্থদের তটস্থ করে রেখেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলজিইডির কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, তিনি যোগদানের পর থেকেই ঠিকমতো অফিস করেন না। এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রে স্বাক্ষর সময়মতো করা সম্ভব হয় না। এ কারণে দাপ্তরিক সকল কাজকর্মে স্থবিরতা নেমে এসেছে। প্রতি সপ্তায় দুয়েক দিন অফিস করে হাজিরা খাতায় পুরো সপ্তার স্বাক্ষর করেন। তার পরিবার ঢাকার থাকে এমন কথা বলে তিনি সপ্তার মঙ্গল কিংবা বুধবার মেহেরপুর জেলার বাইরে চলে যান। পরের সপ্তার সোম কিংবা মঙ্গলবার অফিসে ফিরে এসে হাজিরা খাতায় একদিনে পুরো সপ্তার স্বাক্ষর করেন। কিন্তু তিনি কোনো ছুটি গ্রহণ করেন না। গত বুধবার সকালে অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে অফিসের কর্মরতরা ভিন্ন ভিন্ন উত্তর দিয়েছেন। কেউ বলেছেন স্যার ঢাকায় গেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন স্যার বাইরে আছেন। তবে সপ্তার দু দিন বাকি থাকতে ছুটি ছাড়া কীভাবে তিনি বাইরে গেছেন সে প্রশ্নের উত্তর তাদের কাছে নেই বলে জানান কয়েকজন কর্মচারী। তিনি ছুটি নিয়ে গেছেন কেউ কেউ এমন দাবি করলেও ছুটির কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর নাম ভাঙিয়ে তিনি এমন স্বেচ্ছাচারিতা করে অধীনস্থদের মুখ বন্ধ করে রেখেছেন।

নির্বাহী প্রকৌশলীর স্বেচ্ছাচারিতায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন তার অধীনস্থরা। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আশঙ্কায় আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। মেহেরপুর এলজিইডি অফিসের সামনের সড়কের সংস্কার কাজের সময় ঠিকাদারের লোকজন কার্য সহকারী আব্দুল মান্নানকে বেধড়ক মারপিট করে। তার অপরাধ ছিলো দরপত্রে উল্লেখিত শর্ত অনুযায়ী কাজ বুঝে নেয়া। জেলা অফিসের সামনেই এ ধরনের ঘটনায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কিন্তু ঠিকাদারকে ডেকে জামাই আদর করে আব্দুল মান্নানের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে দেন। এতে হতবাক হন গোটা অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কর্মরত অবস্থায় একজন কর্মচারী এ ধরনের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হলেও নির্বাহী প্রকৌশলী তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা কেন নিলেন তা ভেবে পাচ্ছেন না কর্মরতরা। অপরদিকে এতোবড় একটি ঘটনা তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাউকেও অবহিত করেননি। ঠিকাদারদের সাথে তার অন্যরকম সম্পর্ক থাকায় এমনটি হয়েছে বলে মনে করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয়রা। এ ধরনের ঘটনার বিচার না পেয়ে উল্টো নির্বাহী প্রকৌশলীর রোষানলে পড়তে হয়েছে আব্দুল মান্নানের। তাই এখন কোন সাইডে আর কাজ বুঝে নিতে সাহস করছেন না নিয়োজিত প্রকৌশলী কিংবা কার্য সহকারীরা।

মেহেরপুর এলজিইডির কাজকর্মের স্থবিরতা কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা ও নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা। অভিযোগের এসব বিষয়ে মোবাইলফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও নির্বাহী প্রকৌশলীর মোবাইলফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।