মনজুর আলম: এখন চৈত্র মাস। ঝিনাইদহের পাট চাষিরা জমিতে পাটবীজ বোনার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। কিন্তু পাটবীজের বাজার চলে গেছে অনিবন্ধিত বীজ ব্যবসায়ীদের দখলে। নিবন্ধন নিয়েও অনিবন্ধিত বীজ ব্যবসায়ীদের দাপটে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। ইচ্ছেমতো দামে পাটবীজ বিক্রি করছে দোকানিরা। কৃষকরা বীজ কিনে প্রতারণার শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শৈলকুপার হাট ফাজিলপুর গ্রামের পাটচাষি সেলিম হোসেন মণ্ডল ও আব্দুল বারি মিয়া জানান, এখন পাট বীজ জমিতে বোনার ভরা মরসুম। প্রতি বছরই বিভিন্ন আবাদের মরসুমকে সামনে রেখে হাট বাজারের অনিবন্ধিত বীজের দোকান গুলোতে দেদারছে বীজ বিক্রি হয়ে থাকে। এমনকি মোদি দোকানেও বীজ বিক্রি করা হয়। কোন বীজ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন আছে, আর কোনটির অনুমোদন নেই তা দেখে বোঝার উপায় নেই। ফলে বীজ কিনে মাঝে মধ্যেই কৃষকরা প্রতারিত হচ্ছে। ব্যবসায়ীরাও ইচ্ছে মতো দামে বীজ বিক্রি করছে বলেও অভিযোগ করেন। তারা আরো জানান, গত সপ্তাহে যে বীজ প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ২৮০-২৮৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। এখন সেই বীজ ৪শ থেকে ৪শ ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ঝিনাইদহ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন’র সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ভার.) মো. সফিউদ্দিন সবুজ জানান, জেলার ৬টি উপজেলায় বিএডিসি’র নিবন্ধিত বীজ ডিলারের সংখ্যা ৭৮টি। যা সদর উপজেলায় ১১, কালিগঞ্জ উপজেলায় ১৬, কোটচাঁদপুর উপজেলায় ০৭, মহেশপুর উপজেলায় ১৯, শৈলকুপা উপজেলায় ১৭ এবং হরিনাকুণ্ডু উপজেলায় ১৭ জন নিবন্ধনকৃত বীজ ডিলার রয়েছে। তবে চলতি অর্থ বছরে বেশ কয়েক জন বীজ ডিলারের জন্য আবেদন করেছেন। যার সংখ্যা ৮৫/৯০ জন হতে পারে বলে তিনি জনান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামে এমনকি গ্রামের হাট বাজারে বৈধ-অবৈধ গড়ে উঠা সার কীটনাশকের দোকান গুলোতেও অবাধে পাটবীজ বিক্রি হচ্ছে। জেলার ৬টি উপজেলায় এমন অনিবন্ধিত বীজ বিক্রেতার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ হাজারেরও অধিক বলে জানা গেছে।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কাদিখালি গ্রামের চাষি জাহিদুর রহমান ও ইসরাফিল হোসেন জানান, গ্রামের মোদি দোকান পাটবীজ বিক্রি হচ্ছে। এখান থেকে বীজ কিনে জমিতে সঠিক সময় বোনার পরও চারা গজায়নি। আবার পাট বীজ কিনে জমিতে বুনতে হচ্ছে। বীজ মনিটরিং কমিটির বিশেষ নজর এ দিকে দেয়া দরকার বলে তারা মনে করেন।
একাধিক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে পাটবীজ কিনে বিক্রি করছি। যার অধিকাংশ ভারতীয় এলসি করা বলে শুনেছি। বর্তমানে কৃষি সেবায়ন, কৃষাণ, এনএসসি নবীন, মহারাষ্ট্র হালগরু এবং চাকা, হাংগ্রীর কাবেরি, চক্র, খুশি কৃষান, বিএডিসি’র পাট বীজসহ ৯-১০ প্রকার বীজ বিক্রি হয়ে থাকে। বিষয়টির দিকে বীজ মনিটরিং কমিটির নজর দেয়া দরকার বলে ব্যবসায়ীরাও মনে করেন।
এ বিষয়ে জেলা বীজ প্রত্যায়ন অফিসার কৃপাংশু শেখর বিশ্বাস জানান, বীজ মনিটরিং’র বিষয়ে আন্তারিক। কোন স্থানে বীজ কিনে কৃষকরা প্রতারিত হচ্ছে, প্রতারিত হয়েছে এমন সংবাদ, অভিযোগ পেলে নিয়মানুযায়ী দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি।
ঝিনাইদহ কৃষি বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর এবং বীজ মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব শাহ মোহাম্মাদ আকরামুল হক জানান, আমরা অনুমোদিত ডিলারদের নিকট থেকে বীজ কিনে ব্যবহার করার জন্য কৃষকদের সচেতন করছি।