স্টাফ রিপোটার: চুয়াডাঙ্গায় পরশু মধ্যরাতে টানা দেড় ঘণ্টা ধরে মুষলধারে বৃষ্টি হয়। আবহওয়া অধিদফতর এ সময় ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে। যশোরেও প্রায় একই পরিমাণের বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত সীতাকুণ্ডে ৬৩ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়।
ঝড়ো বাতাস আর বৃষ্টির কারণে গতপরশু রাতে চুয়াডাঙ্গায় বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ ছিলো। বৃষ্টি থামলেও সরবরাহ লাইন দেখার কেউ না থাকার কারণে গতকাল সকালে বিদ্যুত সরবরাহ শুরু হয়। মাঠে কৃষকদের ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভুট্টারও কম বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকার কৃষকেরা। কৃষকদের অবশ্য অভিযোগ, বৃষ্টিতে আর কতোটুকু হলো, দামেই তো মেরে দিলো। সিন্ডিকেট গড়ে তুলে ব্যবসায়ীসহ ফিড কারখানাগুলো ভুট্টার দাম দিচ্ছে না। পরশুর বৃষ্টিতে জীবননগরেও নেমে আসে বিদ্যুত বিপর্যয়। ঝিনাইদহেও বিদ্যুত সরবরাহ বিঘ্নি হয়। হরিণাকুণ্ডে কালবোশেখির আঘাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধি।
এদিকে আবহওয়া অধিদফতর জানিয়েছে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এ মরসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ১-৩ ডিগ্রী সে. বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পটুয়াখালীতে ৩০ দশমিক ৬ ও সর্বনিম্ন রংপুরে ১৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। বৃষ্টির কারণে চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রাও গতকাল ছিলো মনোরম তথা সর্বোচ্চ ২৮ ও সর্বনিম্ন ১৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে কালবোশেখি ঝড়ে বিদ্যুত সরবরাহে বিপর্যয় ঘটে। রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে উপজেলার কয়া গ্রামে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে বিদ্যুত সরবরাহ লাইন ও ট্রান্সমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জুনিয়ার প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। এছাড়াও ঝড়ে বহু ঘর-বাড়ির টিনের চালা উড়ে গেছে এবং কলাগাছ, সজিনা গাছ ভেঙে পড়ে ও আমের গুটি এবং ভুট্টাক্ষেতসহ উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
হরিণাকুণ্ডু প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু পৌরসভাসহ ৮টি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বুধবার সন্ধায় বয়ে যাওয়া মরসুমের প্রথম কাল বোশেখির তাণ্ডবে জন জীবন বিধস্থ হয়ে পড়ে। কৃষিখাতে ক্ষতির পরিমাণ বেসামার। গ্রামীণ জনপদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বসবাসের আবাস গৃহ কাচা এবং আধাপাকা বহু ঘর বিদ্ধস্ত হয়েছে। রাস্তার পাশের বড়বড় গাছপালাসহ বিভিন্ন বাগানের বৃক্ষরাজিও বিপুল পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষিখাতে বিশেষ করে দেশের পান উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে পরিচিত অঞ্চলটির শ শ বিঘা পানবরজ কাল বোশেখির রোষানলের শিকার। বোরো মরসুমের ফোলা ধান ক্ষেতের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাওয়ায় ধানের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া কলা, পেপে, সবজী, ভুট্টাসহ চলতি মরসুমের সকল প্রকার ফসল ব্যাপক আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যুতের লাইন ছিড়ে একটানা ৩দিন পর্যন্ত বলতে গেলে সমগ্র এলাকা বিদ্যুত বিহীন অবস্থায় নিপতিত। ফলে বিদ্যুত নির্ভর জনগোষ্ঠী যেন বর্তমান সভ্যতার স্পর্শ থেকে ক্ষণিকের জন্য হলেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।