রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকরা একে অপরের পরিপূরক : সাংবাদিকদের বাদ দিয়ে রাজনৈতিক নেতারা চলতে পারেন না

 

স্টাফ রিপোর্টার: উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের দ্বিবার্ষিক (২০১৬ ও ২০১৭) কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অভিষেকের আয়োজন করা হয়। অভিষেককে ঘিরে বর্ণিলসাজে সাজানো হয় উৎসব ভেন্যু চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব মিলনায়তন।

বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের নবনির্বাচিত সভাপতি মাহতাব উদ্দিনের কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি আজাদ মালিতার সভাপতিত্বে অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি। শপথবাক্য পাঠ করান বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক মো. দেলোয়ার হোসাইন। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি জেলা পরিষদ প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মনজু এ সময় এক লাখ টাকা অনুদানের ঘোষণা দিলে উপস্থিত সাংবাদিকসহ সুধীজনেরা হাততালি দিয়ে তাকে অভিনন্দিত করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার এমপি বলেন, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকরা একে অপরের পরিপূরক। সাংবাদিকদের বাদ দিয়ে রাজনৈতিক নেতারা চলতে পারেন না।  রাজনীতি না থাকলে সাংবাদিকরা যেমন সংবাদ পাবেন না, তেমনি সাংবাদিক না থাকলে রাজনৈতিক নেতারাও তাদের কর্মকাণ্ড প্রচার ও প্রসারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকদের ভূমিকা তুলে ধরে হুইপ বলেন, ঢাকার হাটখোলা রোডের ইত্তেফাক অফিসে বসে বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমান ও  দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া দুইজন মিলে প্রথম বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন দেশ গঠনের বিষয়ে আলোচনা করেন। মুক্তিযুদ্ধের আগে মানিক মিয়া তার কলামে যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন তা বিরল। মানিক মিয়ার কলামের কারণে দৈনিক ইত্তেফাক এবং জহুর আহমেদ চৌধুরীর কলামের কারণে বিপুল সংখ্যক পাঠক দৈনিক সংবাদ পড়তেন।

হুইপ আরো বলেন, বর্তমান সময়ে সাংবাদিকদের ভেতরে দ্বিধাবিভক্ত থাকায় সাংবাদিকরা সেভাবে সাহসিকতার পরিচয় দিতে পারেন না। আবার অনেকেই নানাভাবে এই পেশাটিকে কলুষিত করে চলেছেন। সাংবাদিক সমাজের মর্যাদার প্রশ্নে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। আজকে যারা শপথ নিলেন তাদেরকে বলবো- যেসব সাংবাদিক বিভিন্ন কারণে আলাদা সংগঠন করেছেন, তাদেরকে সাথে নিন। এলাকার উন্নয়নের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করুন।

কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসাইন বলেন, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি শ্রম অধিদপ্তর নিবন্ধিত একটি বৈধ সংগঠন। যার কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত। আজকে যারা (গতকাল সোমবার) শপথ গ্রহণ করলেন, তারাই বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের বৈধ নেতা। আমি শুনেছি, কিছুদিন আগে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক মিলে বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিট নামে একটি কমিটি তৈরি করেছেন। ওই কমিটির কোনো বৈধতা নেই। যারা ওই অবৈধ কমিটি গঠন করেছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ, যেহেতু আপনারা সাংবাদিকতা পেশার সাথে জড়িত, তাই বৈধ কমিটির সাথে মিলেমিশে কাজ করুন। সভাপতির বক্তব্যে আজাদ মালিতা বলেন, চুয়াডাঙ্গার সংবাদপত্র, সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার মানোন্নয়নে প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতি আগামীতে যৌথভাবে কাজ করবে।

দৈনিক প্রথম আলোর চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী সদস্য শাহ আলম সনির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস ও জেলা পরিষদ প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মনজু। জেলা প্রশাসক বলেন, কিছুদিন আগে বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের পরিচয়ে কতিপয় সাংবাদিক একটি ঘরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট লাইন উদ্বোধনের জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তাদের আমন্ত্রণে সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু অ্যাকটিভ সাংবাদিকদেরকে সেখানে দেখতে পাইনি। তাদের কাছে একাধিকবার বিষয়টি জানতে চাইলেও সকলেই প্রসঙ্গটি কৌশলে এড়িয়ে গেছেন। পরে প্রেসক্লাব সভাপতির কাছে শুনে সবকিছু পরিষ্কার বুঝতে  পেরেছি। মাহফুজুর রহমান মনজু অভিযোগ করেন, এক শ্রেণির লোক সাংবাদিকতার পরিচয় দিয়ে হলুদ সাংবাদিকতা করে থাকেন। অনেকে তাদেরকে সাংবাদিক না বলে সাংঘাতিক বলেন। এসব সাংঘাতিকদের থেকে প্রকৃত সাংবাদিকদেরকে দূরে থাকতে হবে। মহান এ পেশাকে কলুষিত করতে দেয়া ঠিক হবে না।

আমন্ত্রিত অতিথি পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মহ. সামশুজ্জোহা বলেন, বর্তমান সরকার সারাদেশে ব্যাপক উন্নয়নে কাজ করছে। স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে প্রত্যাশা, জেলায় যেসব উন্নয়ন হয়েছে বা হচ্ছে, সেগুলো নিয়ে প্রতিবেদন করা। সেই সাথে জেলার সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে প্রতিবেদন করতে হবে। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফাইজার চৌধুরী নবনির্বাচিত পরিষদকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, চুয়াডাঙ্গার সাংবাদিকতার মানোন্নয়নে এই কমিটি যথাযথ ভূমিকা রাখবে, সেটাই প্রত্যাশা।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে জেলা তথ্য অফিসার আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হচ্ছে গণমাধ্যম। চুয়াডাঙ্গার গণমাধ্যমকর্মীরা অনেক সচেতন ও দায়িত্বশীল। আগামীতেও তারা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দৈনিক মাথাভাঙ্গা সম্পাদক সরদার আল আমিন বলেন, চুয়াডাঙ্গার সাংবাদিকরা সাহসিকতার সাথে সবসময়ই সঠিক খবর তুলে ধরার চেষ্টা করেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের স্বার্থের কথা বিবেচনা করেই সংবাদ পরিবেশিত হয়। আগামীতেও ইতিবাচক চুয়াডাঙ্গা গঠনে সাংবাদিকরা ভূমিকা অব্যাহত রাখবেন। সাংবাদিক সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য দৈনিক আকাশখবরের সম্পাদক তছিরুল আলম মালিক ডিউক বলেন, সাংবাদিকতার মতো একটি মহান পেশায় থেকে যারা কূটকৌশল অবলম্বন করেন, তাদেরকে এ পেশা ছেড়ে দেয়া উচিত। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল  জেএসডির কেন্দ্রীয় নেতা চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের দাতা সদস্য মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, চুয়াডাঙ্গার সাংবাদিকরা অনেক প্রতিকূলতা কাটিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছেন। এখন তাদের উচিত জেলার সার্বিক উন্নয়নে জোরালো ভূমিকা রাখা। চুয়াডাঙ্গা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জহির রায়হান বলেন, স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে প্রত্যাশা পেশাদারত্ব মনোভাব নিয়ে সাংবাদিকতার ধারা অব্যাহত রাখুন। বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি আলমডাঙ্গা ইউনিটের সভাপতি শেখ শফিউদ্দিন নতুন কার্যনির্বাহী পরিষদের সাফল্য কামনা করেন।

বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের দ্বিবার্ষিক (২০১৬ ও ২০১৭) কমিটির  নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দ হলেন- সভাপতি মাহতাব উদ্দিন, সহসভাপতি শেখ সেলিম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম, সহসাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন, অর্থ সম্পাদক মিজানুল হক মিজান, প্রচার-প্রকাশনা ও সংস্কৃতি সম্পাদক মো. আব্দুস সালাম, ক্রীড়া সম্পাদক শামীম রেজা, দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান চাঁদ এবং কার্যনির্বাহী সদস্য আব্দুল মজিদ জিললু, তছিরুল আলম মালিক ডিউক, আলমগীর কবীর শিপলু, চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু, মাহফুজ উদ্দিন খান, রানা কাদির ও তৌহিদ তুহিন।