মাথাভাঙ্গা মনিটর: লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর বেনগাজিতে সংঘর্ষের মাঝে পড়ে ৪ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনের নাম ও পরিচয় পাওয়া গেছে। চতুর্থ জনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এছাড়া পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমও দুপুরে তার ফেসবুকে নিহতের তথ্য প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হলেন- ময়মনসিংহের হুমায়ন কবির, রাজবাড়ীর জসিম উদ্দিন ও মো. হাসান। আরেকজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। এ বিষয়ে ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে বলেও জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লিবিয়াতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর এএসএম আশরাফুল ইসলাম জানান, লিবিয়ার বেনগাজিতে সংঘর্ষ চলাকালে নিহত বাংলাদেশির সংখ্যা তিনজন। নিহত চতুর্থ ব্যক্তি পাকিস্তানের নাগরিক। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি থেকে ১২০০ কিলোমিটার দূরের শহর বেনগাজিতে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে চারজন বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রাষ্ট্রদূতের বরাত দিয়ে তিনজনের পরিচয় প্রকাশ করে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, রাজবাড়ীর মো. আব্দুর রহিম, ময়মনসিংহ কিংবা ঝিনাইদহের মো. হুমায়ুন কবির এবং যশোরের মো. হাসান নিহত হয়েছেন। নিহত চতুর্থ ব্যক্তির পরিচয় তখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। বাংলাদেশ দূতাবাস সার্বিক পরিস্থিতি সার্বক্ষণিকভাবে মনিটর করা এবং নিহতদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া সম্পাদনের লক্ষ্যে একটি হটলাইন চালু করেছে। এই হটলাইন নম্বর হলো +২১৮৯৪৪৬৪২১৫৪। এই নম্বর সপ্তাহের সাত দিনই ২৪ ঘণ্টা চালু থাকবে বলে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের নাম ও পরিচয় সম্পর্কে দুই রকমের তথ্য কেন জানতে চাইলে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা গতকাল রোববার বলেন, লিবিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত চারজন বাংলাদেশি নিহত হওয়ার খবর পাঠিয়েছেন। চারটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। চতুর্থ ব্যক্তির নাম ও পরিচয় জানা যায়নি। যুদ্ধের মাঝে নিহত হওয়ায় চতুর্থ ব্যক্তির চেহারাও বিকৃত। ফলে তিনি বাংলাদেশি নাকি পাকিস্তানি সেটা বোঝা মুশকিল।
উল্লেখ্য, লিবিয়ায় বর্তমানে একাধিক সরকার রয়েছে। ঢাকায় লিবিয়ার দূতাবাসও দুই ভাগে বিভক্ত। প্রত্যেক পক্ষ পৃথক পৃথক সরকারের পক্ষে কাজ করছে। তারা তাদের ইচ্ছামতো কর্মীদের ভিসা দিচ্ছে। এসব ভিসার যথার্থতা নিয়েও সরকারের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। জাতিসংঘ অবশ্য লিবিয়ায় বিবাদমান গ্রুপগুলোর মধ্যে একটি সমঝোতা প্রতিষ্ঠার কাজ করছে।
লিবিয়ায় বর্তমানে ৭০ হাজার বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছেন। তাদের কেউ কেউ অনেক আগে থেকেই দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। জীবনের ঝুঁকি থাকায় তাদের কেউ কেউ বাংলাদেশে ফিরে না এসে ইউরোপে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করে থাকেন। ইতিপূর্বে লিবিয়াতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা জিম্মি হলে দূতাবাস ত্রিপোলি থেকে তিউনিসিয়ায় সরিয়ে নেয়া হয়। পরে অবশ্য বাংলাদেশের কর্মকর্তাকে ছেড়ে দেয়। ইতঃপূর্বে বাংলাদেশি কর্মীদেরও কেউ কেউ তেলক্ষেত্র থেকে জিম্মি হয়েছিলেন। তবে তাদের শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছিলো জিম্মিকারীরা।
২০১১ সালে লিবিয়ার দীর্ঘদিনের একনায়ক মুয়াম্মাম গাদ্দাফির পতনের পর থেকে দেশটিতে চরম বিশৃঙ্খলা চলছে।