ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত চুয়াডাঙ্গার কোটালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দোস্তবাজারের সরকারি জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা পরিদর্শনে জেলা পরিষদ প্রশাসক

 

নজরুল ইসলাম: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের কোটালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রেণিকক্ষ ও একই ইউনিয়নের দোস্তবাজারের সরকারি জায়গা দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে তা দেখতে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের দিকে সরেজমিনে পরিদর্শনে যান চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মনজু।

গত শনিবার বিকেল ৫টার দিকে হঠাত ঝড় ও বৃষ্টি শুরু হয়। এতে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কোটালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের টিনশেডে তৈরি ৩টি শ্রেণিকক্ষের ওপরের টিনশেড ও ইটের তৈরি দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিদ্যালয় কর্তপক্ষ বিষয়টি চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের কাছে ক্ষতির বিবরণ তুলে ধরে আবেদন করে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে গতকাল দুপুরের দিকে জেলা পরিষদ প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মনজু সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি বিদ্যালয়ের ক্ষতিগ্রস্ত শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা থেকে বিরত রাখার জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন এবং শ্রেণিকক্ষ নির্মাণে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

এদিকে ইউনিয়নের দোস্ত বাজারের জেলা পরিষদের ২১ নং কৃষ্ণপুর মৌজার ২ নং খতিয়ানের ৭৩৫ নং দাগের ৮৯ শতক জমি ২৫ বছর ধরে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি নিজে অথবা লিজ দিয়ে ভোগ দখল করে এলেও জেলা পরিষদকে কোনো প্রকার রাজস্ব দিতো না। এ নিয়ে দৈনিক মথাভাঙ্গা পত্রিকায় কয়েক মাস আগে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সার্ভেয়ার দিয়ে ওই জমি মাপজোক করান। মাপজোকের সময় উপজেলা প্রশাসন জানতে পারে দখলীয় ৮৯ শতক জমি জেলা পরিষদের। বিষয়টি জেলা পরিষদকে প্রতিবেদন আকারে জানালে নড়েচড়ে বসে জেলা পরিষদ। সরকারি জমি দখলমুক্ত করতে দোস্ত বাজারের ১৯ জন দখলদারের বিরুদ্ধে সরকারি জমির দখল ছাড়তে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ হামিম হাসান একটি নোটিশ প্রদান করেন। টনক নড়ে দখলদারদের। শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। তারই আলোকে গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা পরিষদ প্রশাসক। এ সময় তিনি বাজারের ভূসিমাল ব্যবসায়ী আব্দুর রহমানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে দখলদার, বাজার কমিটি ও এলাকার নেতৃস্থানীয়দের সাথে জেলা পরিষদের জায়গা দখলমুক্ত করতে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন। তাৎক্ষণিক বাজার কমিটি ও দখলদাররা সিদ্ধান্ত না দিতে পারায় জেলা পরিষদের নিকট সময় প্রার্থনা করেন। জেলা পরিষদ আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। এর মধ্যে সমাধান না হলে জেলা পরিষদ তার জায়গা দখলমুক্ত করতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সে বিষয়ে কারো আপত্তি থাকবে না মর্মে জেলা পরিষদের নিকট লিখিত দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বেগমপুর ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক হামিদুল্লাহ, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান কাজল, বেগমপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শামসুল হক, বাজার কমিটির সভাপতি আব্দুল বারী বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, কোটালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ফজলুর রহমান প্রমুখ।

স্থানীয়রা জানায়, ওই ৮৯ শতক জমির পেছনে ঈদগা কমিটির জায়গা। সে হিসেবে ঈদগা কমিটি নামকাওয়াস্তে কয়েকজনের নিকট লিজ দিয়ে ঈদগার ফান্ড তৈরি করে। নামকাওয়াস্তে লিজগ্রহীতারা উচ্চমূল্যে বিভিন্ন জনের নিকট লিজ দিয়ে মাসিক ভাড়া নিয়ে আসছে। যদি জেলা পরিষদ নতুন করে দখলদারদের লিজের আওতায় আনে তাহলে বর্তমানে যারা ভোগদখলে আছে তাদেরকেই প্রাধান্য দেবে এমনটাই দাবি এলাকাবাসীর। আবার অনেকেই বলেছেন, বাজারের ওপরের জায়গা এমনভাবে দখল করা হয়েছে যে, যানবাহন চলাচলে চরম সমস্যায় পড়তে হয় চালকদের। তাই চলাচলের স্বার্থে জায়গাটি খালি হওয়া দরকার। কারণ হিজলগাড়ি-দর্শনা সড়কটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ততম সড়ক। বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো দোস্তবাজার এলাকায় চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। এ সময় জেলা পরিষদ প্রশাসকের সাথে ছিলেন- জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. হামিম হাসান ও সার্ভেয়ার হাফিজুর রহমান।