স্টাফ রিপোর্টার: বিদেশি শ্রমিক নেয়া পুরোপুরি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালয়েশিয়া, যার ফলে বাংলাদেশের ১৫ লাখ শ্রমিক নেয়ার চুক্তি হলেও তা আটকে গেল। মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমদ জাহিদ হামিদিকে উদ্ধৃত করে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বারনামা শনিবার বিদেশি শ্রমিক নেয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
এর আগে দেশটি বিদেশি শ্রমিক নেয়া স্থগিত করলেও চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি নতুন শ্রমিকদের যাওয়ার বিষয়ে ঢাকার কর্মকর্তারা আশাবাদী ছিলেন। আহমদ জাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, যারা বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ করতে চান তারা দেশে থাকা অবৈধসহ বিদেশি শ্রমিকদের কাজে নিতে পারবেন। তারা (নিয়োগকর্তা) সিক্স-পি কর্মসূচির (অবৈধ অভিবাসীদের পুনর্বাসনে নেয়া সমন্বিত কর্মসূচি) আওতায় অনিবন্ধিত নয়, এমন শ্রমিকদেরও নিয়োগ দিতে পারবেন। তিনি বলেন, এই কর্মসূচির আওতায় আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বিদেশি শ্রমিকদের কাজে নিতে নিবন্ধনের জন্য সুযোগ দিয়েছে সরকার। এর পর যে সব নিয়োগকর্তা অবৈধ শ্রমিকদের আশ্রয় দেবে তাদের বিরুদ্ধে কড়াকড়িভাবে আইন প্রয়োগ করা হবে বলে জানান তিনি। ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ থেকে সম্ভাব্য ১৫ লাখ শ্রমিক নিতে সমঝোতা স্মারকে সই করার পরদিন বিদেশি শ্রমিক নেয়া স্থগিত করে মালয়শিয়া সরকার। ওই দিন আহমেদ জাহিদ হামিদি বলেন, কতো শ্রমিক আমাদের প্রয়োজন সে বিষয়ে সন্তোষজনক তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত সরকার বিদেশি কর্মী নেয়া স্থগিত রাখবে। বিদেশি শ্রমিক ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর বাড়তি লেভি আরোপের নিয়মও এই সময় স্থগিত থাকবে বলে জাহিদ হামিদি জানান। মালয়েশিয়ার বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দুটি বিষয় নিয়েই আপত্তি তোলা হচ্ছিলো বেশ কিছুদিন ধরে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির গুরুত্বপূর্ণ বাজার। বর্তমানে প্রায় ছয় লাখ বাংলাদেশি সেখানে বিভিন্ন পেশায় রয়েছেন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালে ‘জি টু জি’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেয়া শুরু করে মালয়েশিয়া। সে অনুযায়ী শুধু সরকারিভাবে মালয়েশিয়ার ‘প্ল্যান্টেশন’ খাতে শ্রমিক পাঠানো হচ্ছিলো। কিন্তু ‘প্ল্যান্টেশন’ খাতে কাজ করতে আগ্রহীর সংখ্যা কম হওয়ায় ওই উদ্যোগে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। পরে মালয়েশিয়ার জনশক্তির জন্য বাংলাদেশ ‘সোর্স কান্ট্রির’ তালিকায় এলে সেবা, উৎপাদন, নির্মাণসহ অন্যান্য খাতে বাংলাদেশি কর্মী নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়। মালয়েশিয়া সরকার তাদের ৫টি খাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে রাজি হওয়ার পর ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু তার পরদিনই দেশটির উপ প্রধানমন্ত্রী বিদেশি কর্মী নেয়া বন্ধের কথা জানান। মন্ত্রিসভায় সমঝোতা স্মারকের খসড়া অনুমোদন এবং তা সই হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ১৫ লাখ শ্রমিক পাঠানোর কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু মালয়েশিয়ার সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, চুক্তিতে কোনো সংখ্যা বেঁধে দেয়া হয়নি।