দামুড়হুদার চিৎলাস্থ সোনালী ইটভাটায় ধসেপড়া মাটির নিচে চাপা পড়ে ভাটা শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু

 

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদার চিৎলাস্থ সোনালী ইটভাটায় মাটির উচু স্তুপ থেকে মাটি কাটার সময় ধসেপড়া মাটির নিচে চাপা পড়ে হেদায়েতুল্লাহ (২৪) নামের এক ইটভাটা শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আছের উদ্দিন (২২) নামের অপর এক ভাটাশ্রমিক আহত হন। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। নিহত ভাটাশ্রমিক হেদায়েতুল্লাহ  দামুড়হুদা উপজেলার পুরাতন বাস্তুপুর গ্রামের মৃত আনছার আলীর ছেলে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের পুরাতন বাস্তুপুর গ্রামের মৃত আনছার আলীর একমাত্র ছেলে ইটভাটা শ্রমিক হেদায়েতুল্লাহ গতকাল সকালে প্রতিবেশী শুকুর আলীর ছেলে আছের উদ্দিন, আব্দুল মান্নানের ছেলে সাদেকুর, আব্দুর রশিদের ছেলে তরিকুল, মোজাম্মেল হকের ছেলে কলিম ও আলমের সাথে দামুড়হুদার চিৎলাস্থ সোনালী ইটভাটায় মাটি কাটার কাজে যায়। নিহত ভাটা শ্রমিক হেদায়েতুল্লাহ ও তরিকুল ইটভাটার মাটির উঁচু স্তুপ (হিপ) থেকে মাটি কাটছিলো এবং অপর ৪ শ্রমিক ওই মাটি ট্রাক্টরে তুলে দিচ্ছিলো। দুপুর দেড়টার দিকে মাটির ওই উচু স্তুপ থেকে আকর্স্মিক মাটির একটি বড় পাড় হেদায়েতুল্লাহর মাথার ওপর পড়ে এবং সে ওই পাড়ের নিচে চাপা পড়ে। এতে তার মাথার ডান পাশে লেগে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয় এবং মাথার মগজ বেরিয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পাশে থাকা অন্যান্য শ্রমিকরা মাটির পাড় সরিয়ে তাকে দ্রুত বের করে আনে। কিন্ত তার আগেই সে চলে যায় না ফেরার দেশে। এ সময় তার পাশে থাকা অপর ভাটা শ্রমিক আছের উদ্দিনও ভেঙে পড়া ওই মাটির আঘাতে আহত হয়। তাকে চিৎলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে নেয়া হয়। এদিকে ভাটা শ্রমিক হেদায়েতুল্লাহর মৃত্যুর খবর নিজ বাড়িতে পৌঁছুলে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা, দু বোন, স্ত্রীসহ স্বজনরা। মা মমতাজ আর স্ত্রী বিথির আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। দুই বছর বয়সী একমাত্র শিশুপুত্র মুবিন বারবার তাকাচ্ছিলো মায়ের কান্নাজড়িত মুখের দিকে। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নিহতের জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। এক সন্তানের জনক ভাটা শ্রমিক নিহত হেদায়েতুল্লাহ গ্রামেরই দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল এবং দামুড়হুদা আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সে ছিলো মেজ। প্রায় ৯ বছর আগে তার পিতা মারা যায়। অনেক কষ্টের মধ্যেই হেদায়েতুল্লাহ লেখাপড়া চালিয়ে যায়। সে ৫ বছর আগে একবার পুলিশে চাকরির জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলো এবং পরীক্ষায়ও টিকেছিলো। কিন্ত টাকার অভাবে ওই চাকরিটি আর হয়নি বলে জানান প্রতিবেশী সাবেক ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম। ওই চাকরিটি হলে হয়তো তাকে ওই ভাটায় কাজও করতে হতো না এবং তার এ অকাল মৃত্যুও হতো না বলে তার ধারণা।

দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ লিয়াকত হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ দাখিল করেনি। ইটভাটায় কাজ করার সময় দুর্ঘটনায় শ্রমিক নিহত হলে তার পরিবারকে মোটা অঙ্কের টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিধান রয়েছে। ইটভাটায় শ্রমিক নিহত হলেও ঘটনার দিন কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে কি-না যেমন জানা সম্ভব হয়নি।