কুষ্টিয়ার মিরপুরে তাঁত শ্রমিকদের দুর্দিন

 

মিরপুর প্রতিনিধি: একসময় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টাকুর-টুকুর শব্দে মুখর হয়ে থাকতো তাঁত পল্লি। এখন টাকুর-টুকুর শব্দ আর শোনা যায় না। নেমে এসেছে সুনসান নীরবতা। মাঝে মাঝে কয়েকটি তাঁত কল চললেও আগের মতো আর তাদের তাঁতে সুর ওঠে না। যেটুকু কাজ হয় তা দিয়ে তাঁতী পরিবার চলে না। পেটের দায়ে পূর্ব-পুরুষের পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমবাড়ীয়া ইউনিয়নের আমবাড়ীয়া গ্রামের কারিগর পাড়ার তাঁত পল্লির নির্জনতা এখন তাঁতী পরিবারগুলোর বোবা কান্নার সমার্থক। কারিগর পাড়ার সবচাইতে পুরোনো তাঁতী আব্দুল আজিজ (৬০) জানান, বর্তমানে তাঁত কাজ করে আর সংসার চলে না। সুতার দাম বেশি হওয়ায় এ কাজ করে আর লাভ হয় না। এছাড়া কারিগররাও আর এ কাজ করতে চায় না। পূর্ব-পুরুষরা এ কাজ করতেন। তাই আমি কোনোমতে এ কাজটাকে ধরে রেখেছি। টাকার অভাবে ছেলে-মেয়েদের ঠিকমতো লেখাপড়া করাতে পারিনি। বিবাহযোগ্য একটা মেয়েকে বিয়ে দিতে পারছি না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমরা অন্য কাজ করতে পারি না। সমাজের চোখেও তাঁতী বলে আমাদের ছোট জাত ভাবা হয়। আমরা কি করবো বলতে পারেন? হয় সরকার একেবারে উচ্ছেদ করে দিক- নয়তো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকতে আমরা কন্ট্রোলে সুতা কিনতে পারতাম। সেটাও আর পারি না। এলাকার ৫০ ঘর তাঁতী থাকলেও পর্যাপ্ত সুতার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৩০টি তাঁত। আরেক তাঁতী নাসিমা খাতুন (৩০) জানান, আমার পরিবারে ভালো উপার্জনের মতো কেউ নেই। তাই আমার স্বামীর পাশাপাশি আমাকে এই কাজ করতে হয়। কিন্তু রোজগার অতি-সামান্য। এ ব্যাপারে আমবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী টুটুল জানান, বর্তমানে এই অঞ্চলের তাঁতীদের খুব কষ্টে দিন কাটছে। তাদের এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মুরাদ হোসেন জানান, তাঁতীদের দুর্দিনের কথা আমি শুনেছি। তবে এ ব্যাপারে সমাজসেবা অধিদফতরের কোনো সহযোগিতা করার সুযোগ নেই। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজাদ জাহান জানান, বর্তমানে তাঁতীদের জন্য সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা আছে বলে আমার জানা নেই। তবে আমার জানা মতে, যুব উন্নয়ন অধিদফতর কুটির শিল্প উন্নয়নে সহযোগিতা করে থাকে। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া যুব উন্নয়ন অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোর্শেদ আলম জানান, যে সকল যুবক-যুবতী যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে শুধুমাত্র তাদেরই ঋণ প্রদান করা হয়। তারা যদি এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তাঁত কাজ চালায় তাহলে আমরা তাদের ঋণ দিতে পারি। বর্তমানে উপজেলার তাঁতীদের যে অবস্থা আর সাহায্যের জন্য সরকারি এক দফতর অন্য দফতরের পাল্টাপাল্টি যে বক্তব্য তাতে এই তাঁত পল্লির ভবিষ্যত কি হবে তা নিয়ে তাঁতীরা রীতিমতো চিন্তিত।