আমজনতা চায়, আইন হোক সকলের জন্য সমান

 

প্রকাশ্যে কিশোর বা নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হলো, অথচ কেউ প্রতিবাদটুকু করলেন না। কেন? তবে কি সমাজ থেকে সচেতন দায়িত্বশীল মানুষ উধাও হয়ে গেলো? না, সচেতন প্রতিবাদী মানুষ উধাও হয়নি, হয়েছে সচেতন দায়িত্বশীলদের জন্য নেতার বাড়ির দরজা বন্ধ। যে সমাজে নেতার কাছে পেশি শক্তি প্রয়োগকারীদেরই কদর বেশি, সেই সমাজে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস থাকে নাকি?

যে বা যারা নির্যাতন করে তারাই নেতার কাছে বিশ্বস্ত, ওদের কথাই বিশ্বাস করেন। সচেতন সাধারণ মানুষ তথা প্রতিবাদী কেউ নেতার হাতা গোতার অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতা নির্যাতন নিপীড়নের বিষয়ে নেতার কাছে নালিশ করে উল্টো হয়রানির শঙ্কায় পড়লে ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্য করবে কে? সকলেই তো তোষামোদের সুযোগই খুঁজবে। যদিও তোষামোদে তুষ্ঠু নেতাকে আখেরে চরম মূল্যই দিতে হয়। উদাহরণ ভুরি ভুরি। ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন। কারণ, গৃহপালিত পশুতে ক্ষেত খাওয়া। এ নিয়ে বিরোধের জের ধরে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনার আড়ালেও রাজনৈতিক ও অর্থের প্রভাব বিদ্যমান। প্রকাশ্যে একজন নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন যে বা যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে নেতার কাছে নালিশ দুরাস্ত পুলিশ মামলা নিতেও নাকি ভয় পায়। এই যখন অবস্থা, তখন সমাজের সচেতন প্রতিবাদীরা প্রতিবাদ করতে এগিয়ে যাবে কোন সাহসে?

নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না, যেখানেই নির্যাতন- সেখানেই রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব। তোষামোদকারীদের তুষণ বেড়ে গেলে সচেতন সাধারণ মানুষ ধরেই নেয়, নেতার কাছে গিয়ে সত্যিটা বলে লাভ হবে না। শুধু কি নির্যাতন, হাট বাজারেও স্বেচ্ছাচারিতা দেখে ক্ষতিগ্রস্তরা অসহায়ের মতো সময়ের অপেক্ষা করতে থাকে। অসহায়ত্বের সুযোগে বেড়ে যায় তেল পাম্পে দামি মোটরসাইকেল ভিড়েয়ে জোর করে তেল নিয়ে অমুক ভাইয়ের নামে লিখে রাখার কথা বলে সরে পড়াদের অত্যাচার। জোর করে তেল নেয়াদের দাপুটের বিরুদ্ধে নালিশ দুরাস্ত, হোটেলের মোগলাই পরোটা নিয়ে সটান সরে পড়ার আগে যার নাম বলা হয় তার নামটাও নেতার কান পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার সাহস পায় না হোটেল মালিক বা অন্য কেউ। শুধু হোটেল বা তেল পাম্পে নয়, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও পড়ে কালোথাবা। বলে চিল যখন ছোঁ মেরেছে তখন খড়কুটো হলেও নিয়ে উড়বে। বাস্তবে প্রস্থানেও তাই-ই পরিলক্ষিত হয়।

অবশ্যই তোষামোদকারীদের ঘেরাটপ পেরিয়ে, স্বার্থবাধীদের দেয়া বেড়া ডিঙিয়ে নেতাকে সমাজের বাস্তব চিত্র দেখার মতো প্রখর হতে হবে। পুলিশকেও হতে হবে অর্পিত দায়িত্বের প্রতি যত্নবান। ক্ষমতাসীনদের তোষণের চেয়ে পেশাদারত্ব পুলিশই প্রত্যাশা করে দেশবাসী। আমজনতা চায়, আইন হোক সকলের জন্য সমান। তা হলেই তো নিশ্চিত হবে আইনের শাসন, বৃদ্ধি পাবে গণতন্ত্রের চর্চা।