ঢাকায় দিনব্যাপী পাটপণ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী : পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে

 

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা করে বলেছেন, পাটকে এখন থেকে কৃষিপণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে। পাট উৎপাদন, বিপণন ও রপ্তানির ক্ষেত্রে কৃষিপণ্য হিসেবে প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধাগুলো এখানে প্রদান করা হবে। গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং অ্যাক্ট’ বাস্তবায়নে সম্মাননা প্রদান এবং তিন দিনব্যাপী পাটপণ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী পরিবেশবান্ধব তন্তু হিসেবে পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বলেন, পাট খাতের মাধ্যমে এখনো বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। তিনি শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় এ সময় মজুরি কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমরা অচিরেই মজুরি কমিশন গঠন করে দেব, যাতে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়ে। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহম্মদ ইমাজউদ্দিন প্রামাণিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী ও মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার। অনুষ্ঠানে ‘ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং অ্যাক্ট’-এর সফল বাস্তবায়নে ১৩টি ক্যাটাগরিতে ৪১ জনকে সম্মাননা দেওয়া হয়। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেন, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, আইজিপি শহীদুল হক, র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান, এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ, পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) মহাপরিচালক ড. মো. কামাল উদ্দিন, বিজেএমসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) হুমায়ুন খালেদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে পাটের ওপর থিম সং ‘এসেছে সুদিন বাংলার পাট করবে বিশ্বমাত’ ও একটি তথ্যচিত্র পরিবেশিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। কারও কাছে হাত পেতে নয়, বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। আমাদের সোনালি আঁশ দেশের সমৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে বলেও এ সময় আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দেশের পাটকল বন্ধ করে দিয়েছে বিএনপি। তিনি বলেন, যেখানে বিশ্বব্যাংকের অর্থে ভারতে নতুন নতুন পাট কল গড়ে তোলা হচ্ছিল তখন সেই বিশ্ব ব্যাংকের টাকা খেয়েই বিএনপি এ দেশের পাটকলসহ শিল্প-কারখানা গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২০০২ সালে এশিয়ার সর্ববৃহৎ পাটকল আদমজী জুটমিল বন্ধ করে দেয় বিএনপি। এতে মিলের হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে। বস্ত্র ও পাট খাতের গত কয়েক বছরের উন্নতি ও সমৃদ্ধির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, পাটের এখন সেই অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা বিশ্বের সবচেয়ে উন্নতমানের পাট উৎপাদন করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন জোরদার হওয়ায় পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবে পাটের ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। দেশেও পাটের ব্যবহার বেড়েছে। আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে বছরে পাটের ব্যাগের চাহিদা ১০ কোটি থেকে বেড়ে ৭০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। বন্ধ পাটকলসমূহ পুনরায় চালু করায় ব্যাপক কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি নতুন চালু করা পাটকলগুলো যথাযথভাবে চালু রাখতে যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দেন।

প্রধানমন্ত্রীর পাটের শাড়ি, জুতো: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাটপণ্যের প্রতি নিজের আগ্রহের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমি যে শাড়িটা আজ পরে এসেছি সেটা পাটের তৈরি। আমার জুতোটাও পাটের তৈরি। বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ কোনো অনুষ্ঠানে গেলে তিনি পাটের ব্যাগ ব্যবহার করেন বলে অনুষ্ঠানে জানান।

মন্ত্রীর কাপড়ের দোকান: সভাপতির বক্তব্যে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহম্মদ ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক বলেন, আমি ৪/৫ মণ, ৭ মণ পাট কেনার ফড়িয়া ছিলাম। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) কীভাবে সেটা বুঝেছিলেন। তিনি আমাকে পাটমন্ত্রী করলেন। আমার ছিট কাপড় ও লুঙ্গির দোকান ছিলো। কীভাবে বুঝে তিনি আমাকে বস্ত্র মন্ত্রী করলেন। তিনি বলেন, আমি যে পাটের ফড়িয়া ছিলাম, ছিট কাপড়ের দোকানদার ছিলাম, তার সাক্ষী এখানে নওগাঁ থেকে যারা আছেন তারা।

পাটপণ্য ১২০টি দেশে: বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিশ্বব্যাপী আমাদের পাটের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে ১২০টি দেশে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার আগে তার বক্তৃতায় পাট নিয়ে বৈষম্যের কথা তুলে ধরতেন।’ ৬৯-এর আন্দোলনে, নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল পাটশিল্প জাতীয়করণের কথা। স্বাধীনতার পর তিনি সে কথা রেখেছিলেন।

মির্জা আজমের অনুরোধ: বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম পাটকে কৃষিপণ্য হিসাবে ঘোষণা দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমরা প্যাকেজিং অ্যাক্ট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ২০ লাখ কাঁচা পাটের অভ্যন্তরীণ বাজার সৃষ্টি করেছি। আগে পাট ছিল সম্পূর্ণ রপ্তানি পণ্য। গত কয়েক বছরে দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। এখন আমাদের উৎপাদকরা ১৩১ প্রকার পাটপণ্য উৎপাদন করছে। তিনি বলেন, পাট গবেষণা করে তৈরি করা হয়েছে মিরাকল চা। এটি ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। জাপান থেকে অর্ডার এসেছে। প্রতি বছর ৬ মার্চকে জাতীয় পাট দিবস হিসাবে ঘোষণার আহ্বান জানান তিনি। মির্জা আজম বলেন, পাট পণ্যকে কৃষিপণ্য হিসাবে গণ্য করা হলে তারাও ২০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা পাবে। পরে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় পাটকে কৃষিপণ্য হিসাবে বিবেচনার ঘোষণা দেন।