আরেকটি ঐতিহাসিক অর্জন : ইতিহাসে ঠাঁই পাবে বলে আশাবাদ :
মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর জেলাকে বাল্যবিয়েমুক্ত জেলা ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা 1টায় মেহেরপুর স্টেডিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ওই ঘোষণা দেন। তার ঘোষণার মধ্যদিয়ে মেহেরপুর দেশের প্রথম বাল্যবিয়েমুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষিত হলো। অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় প্রধান অতিথি বলেন, একাত্তরের ১৭ এপ্রিল এই মেহেরপুরের মুজিবনগর আম্রকাননে প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণ ছিলো একটি ঐতিহাসিক অর্জন। আবার বাল্যবিয়েমুক্ত জেলা ঘোষণা আরেকটি ঐতিহাসিক অর্জন হয়ে জেলার নামটি ইতিহাসে ঠাঁই পাবে। বাল্যবিয়েমুক্ত জেলা ঘোষণা করা সহজ কিন্তু ধরে রাখা হিমালয় পর্বতে আরোহণের মতোই কঠিন উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন এ ঘোষণার মধ্যদিয়ে যুদ্ধ শেষ হচ্ছে না, যুদ্ধ শুরু হলো। তাই বাল্যবিয়েমুক্ত রাখার লক্ষ্যে জেলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মো. শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. মকবুল হোসেন, সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য সেলিনা আখতার বানু, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের (সমন্বয় ও সংস্কার) ভারপ্রাপ্ত সচিব এনএম জিয়াউল আলম, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুস সামাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (জিআইইউ) মহাপরিচালক মো. আবদুল হালিম, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টিম হোয়াইট, মেহেরপুরের পুলিশ সুপার হামিদুল আলম, জেলা পরিষদ প্রশাসক অ্যাড. মিয়াজান আলী, পৌর মেয়র মো. মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু।
বাল্যবিঙে অভিশাপ; একটি সামাজিক ব্যাধি। বাল্যবিয়ের কারণে একটি শিশুর শরীরে আর একটি শিশুর জন্ম নেয়। এটি মা ও সন্তান দুজনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা মৃত্যুর কারণ। এর প্রতিকার হওয়া দরকার। এখন থেকে আর একটিও বাল্যবিয়ে নয়। যেখানে বাল্যবিয়ে সেখানেই প্রতিরোধ। এ শপথ নিতে অনুষ্ঠানে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-অভিভাবক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতিতে বক্তব্য রাখেন মেহেরপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. মারুফ আহম্মদ বিজন, সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আসাফ-উদ দৌল্লা, সাংবাদিক রফিক-উল আলম, মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বশির আহাম্মেদ, জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম রসুল, জেলা চেয়ারম্যান সমিতির পক্ষে চেয়ারম্যান আমাম হোসেন মিলু, জেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার সভাপতি শামীম আরা হীরা, জেলা এনজিও সমন্বয় কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন, জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মো. আনসার-উদ্দিন বেলালী, জেলা নিকাহ রেজিস্ট্রার সমিতির পক্ষে হাবিবুর রহমান মাস্টার প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) খায়রুল হাসান, (রাজস্ব) হেমায়েত হোসেন, গণপূর্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উল্লাহ, মুজিবনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মঈনুল হাসান, গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল আমিন, মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হেমায়েত উদ্দিন, সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শাহীনুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আসকার আলী, সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল হালিম, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদিকা লাভলী ইয়াসমিন, ভাষাসৈনিক ইসমাইল হোসেন, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান রিটন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বারিকুল ইসলাম লিজন প্রমুখ।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশের সঞ্চালনায় ছিলেন আবুল হাসনাত দিপু ও নিশান সাবের। অনুষ্ঠানের শেষাংশে শপথবাক্য পাঠ করান গণসমাবেশের প্রধান অতিথি। পরে সেখানে ১৮ এর আগে মেয়ে এবং ২১ এর আগে ছেলের বিয়ে নয় শিরোনামে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সমন্বয়ে একটি ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয়।
এর আগে সকাল সাড়ে দশটার দিকে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে কিছুক্ষণের মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয় জেলা স্টেডিয়াম মাঠ। মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ জেলার বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।