চুয়াডাঙ্গার সাতগাড়ি তটস্থ : টানা আড়াই ঘণ্টা ধরে বোমাবাজিসহ ঘরবাড়ি ভাঙচুর

স্টাফ রিপোর্টার: একের পর এক বোমা বিস্ফোরণের পাশাপাশি বাড়িঘর ভাঙচুরে তটস্থ হয়ে উঠেছে চুয়াডাঙ্গার সাতগাড়ি। গতরাত সাড়ে ৮টা থেকে টানা আড়াই ঘণ্টা তাণ্ডব চালায় একটি পক্ষ। এরা স্থানীয় ছাত্রলীগের একপক্ষের কার্যালয় ভাঙচুরের পাশাপাশি ছাত্রলীগ নেতা খালিদ হোসেনের বাড়িতেও হামলা চালায়।

স্থানীয়রা বলেছে, কমপক্ষে দেড় ডজন বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। ৯/১০টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে কম-বেশি ভাঙচুর করা হয়। বোমাঘাতে একজন আহত হয়েছে। আহত সাব্বিরকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবির একটি টহল দল সাতগাড়িতে অবস্থান নেয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের উপস্থিতিতেও একের পর এক বোমার বিস্ফোরণসহ বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা না ঘটলেও কোনো এক ব্যক্তির মিথ্যা খবরে ফায়ার স্টেশনের সদস্যরা লাল গাড়ি নিয়ে সাইরেন বাজিয়ে সাতগাড়িতে উপস্থিত হন। তার আগে সাতগাড়ি উত্তরপাড়ায় আয়োজিত ওরস মাহফিলের রান্নাবান্না বন্ধ হয়ে যায়।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা পৌর নির্বাচনের আগে-পরে পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটছে। গতপরশু সন্ধ্যার পর কুলচারা মোড়ের ইটভাটার সামনে হামলা চালিয়ে সাতগাড়ি উত্তরপাড়ার জহুরুল ইসলামের ছেলে সজলকে কুপিয়ে জখম করা হয়। তাকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে সহকর্মীদের কয়েকজন। খবর পেয়ে পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু তাকে দেখতে যান। এর আগে ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর চুয়াডাঙ্গা পশু হাসপাতালের সামনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয় ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল হোসেন বিপ্লবকে। খবর পেয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফ হোসেন দুদু তাকে হাসপাতালে দেখতে যান। বিপ্লবকে ঢাকায় নেয়া হয়েছে। তার ওপর হামলার প্রতিবাদে গতপরশু চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে ছাত্রলীগের একাংশ মিছিল করে। ওইদিনই সন্ধ্যায় কুলচারা মোড়ে সাতগাড়ির সজলকে কুপিয়ে জখমের ঘটনা ঘটে। এরপর গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শুরু হয় সাতগাড়িতে ধারাবাহিক হামলার ঘটনা। ভাঙচুর করা হয় ছাত্রলীগের স্থানীয় ওয়ার্ড কার্যালয়ও।

সাতগাড়িতে ধারাবাহিক হামলার খবর পেয়ে সরেজমিন গেলে পাওয়া যায় বারুদের তীব্র গন্ধ আর একের পর এক বোমা বিস্ফোরণের শব্দ। রাত ৯টার দিকে এলাকার রাস্তা ছিলো জনশূন্য। দোকানপাট ছিলো বন্ধ। মোড়ে অবস্থান করছিলো ৭/৮ জনের একদল পুলিশ। পৃথক একদল পুলিশ অবশ্য সাতগাড়ির অপর রাস্তায় ছিলো। মোড় অতিক্রমের সময় পুলিশদল জানায়, ওদিকে নিরাপত্তা নেই। গেলে বিপদ ঘটতে পারে। এরপর মোড়ের অদূরে অবস্থান নিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করে ঘটনার বর্ণনা জানতে চাইলে তারা বলেছেন, পৌর নির্বাচনের পর থেকে ছাত্রলীগের দু পক্ষের বিরোধ তীব্রতর হয়ে উঠেছে। যারা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিপু চৌধুরীর মোবাইল প্রতীকে ভোট করেছে তাদের মাঝে মাঝেই হামলার শিকার হতে হচ্ছে। এবার তারাই ঘুরে দাঁড়িয়ে নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট করা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অফিস ও বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে। অবশ্য কয়েকজন বলেছে, আমরা জিপু চৌধুরীর ভোট করেছি বলে আমাদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে।

গতরাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রথমে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে সাতগাড়ি মোড়ের অদূরে আবদার মিয়ার চাতালে। অল্প সময়ের ব্যবধানে ৪টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ সময় সেখানে আহত হয় সাতগাড়ি নতুনপাড়ার আতিয়ার রহমানের ছেলে সাব্বির (২০)। সাব্বিরকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সাব্বির নিজেকে ছাত্রলীগের কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে বলেছে, আমি জিপু চৌধুরীর ভোট করেছি বলেই অপর পক্ষের হামলার শিকার হয়েছি। অবশ্য বোমা বিস্ফোরণের পরপরই চাতালের অদূরবর্তী সড়কের ধারে ছাত্রলীগের ৭নং ওয়ার্ড কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। চাতালের দিক থেকেই একদল যুবক ছুটে গিয়ে ওই কার্যালয় ভাঙচুর করে। সেখানেও বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এরপর একের পর এক বিক্ষিপ্তভাবে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হতে থাকে। চলতে থাকে বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর। গতরাতে তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া তথ্য মতে, মতিয়ার রহমান, সিরাজুল ইসলাম সিজু, ফজলুর রহমান ও তার মেয়ে বেলি খাতুন, হাসিবুল ইসলাম, সিকদার ও জিয়াউর রহমান জিয়ার বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এছাড়াও সাতগাড়ি মোড়ের কাজল ও ইব্রাহিমের দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। রাত ১১টা পর্যন্ত ঘটনা প্রবাহ চলে।

এদিকে ঘটনার পর পুলিশ জানায়, সাতগাড়িতে বোমা হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে তিন জনকে আটক করে থানায় নেয়া হয়েছে। এরা হলো- চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের মাঝেরপাড়ার আয়ুব আলীর ছেলে আব্দুর রহমান (২৫), জোয়ার্দ্দারপাড়ার আজিজুর রহমানের ছেলে সুমন (২৭) ও আফছার হোসেনের ছেলে বরকত (২৫)।