স্টাফ রিপোর্টার: পঞ্চায়েতের বিরোধের জের ধরেই হবিগঞ্জের সুন্দ্রাটিকি গ্রামের ৪ শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে মাটিচাপা দেয়া হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওই ঘটনায় গ্রেফতার রুবেল মিয়ার দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে গতকাল শুক্রবার রাতে সাংবাদিকদের সামনে এ তথ্য তুলে ধরেন হবিগঞ্জের এসপি জয়দেব কুমার ভদ্র। নিজের কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, সুন্দ্রাটিকি গ্রামের বাগাল পঞ্চায়েত এবং তালুকদার পঞ্চায়েতের বিরোধের জেরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। পুলিশ সুপার বলেন, চার শিশুকে অপহরণের দিন রাতেই তাদের হত্যা করা হয়। মোট ৫ জন ওই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় বলে রুবেল আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছেন।
জবানবন্দির বরাত দিয়ে জয়দেব ভদ্র বলেন, রুবেল মিয়া নিজে এবং আজিজুর রহমান আরজু, হেলাল, শাহেদ ও উস্তার ওই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। এর মধ্যে রুবেল ও আরজুকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও হেলাল, শাহেদ ও উস্তার পলাতক আছেন। এছাড়া আব্দুল আলী বাগাল, তার আরেক ছেলে জুয়েল মিয়া ও বশির মিয়া নামের আরেকজন পুলিশের হাতে গ্রেফতার রয়েছেন। আব্দুল আলী ও জুয়েলকে দশ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। রুবেল শুক্রবার সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের বিচারিক হাকিম কৌশিক আহমদ খন্দকারের কাছে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় ওই জবানবন্দি দেন বলে এসপি জয়দেব কুমার ভদ্র জানান। গত শুক্রবার বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে গিয়ে স্কুল পড়ুয়া চার শিশু নিখোঁজ হওয়ার পর বুধবার সকালে সুন্দ্রাটিকি গ্রামের ঈসা বিল এলাকায় তাদের বালিচাপা লাশ পাওয়া যায়। নিহত শিশুরা হলো স্থানীয় আবদাল মিয়া তালুকদারের ছেলে মনির মিয়া (৭), ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), আব্দুল আজিজের ছেলে তাজেল মিয়া (১০) এবং আব্দুল কাদিরের ছেলে ইসমাইল হোসেন (১০)।
মনির সুন্দ্রাটেকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে এবং তার দুই চাচাত ভাই শুভ ও তাজেল একই স্কুলে দ্বিতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তো। আর তাদের প্রতিবেশী ইসমাইল ছিল সুন্দ্রাটেকি মাদরাসার ছাত্র। তাদের সবাইকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় বলে ময়নাতদন্তের পর জানিয়েছিলেন হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক দেবাশীষ দাশ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সুন্দ্রাটিকি গ্রামের দুই পঞ্চায়েত আবদাল মিয়া তালুকদার ও আব্দুল আলী বাগালের পরিবারের বিরোধ দীর্ঘদিনের। মাসখানেক আগে সীমানা বিরোধ ও গাছ কাটা নিয়ে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে বিষয়টি সালিসেও গড়ায়। এসপি জয়দেব কুমার ভদ্র ব্রিফিংয়ে বলেন, ওই সালিসে স্থানীয় বাগালের সমর্থক আরজু ও স্থানীয় অটোরিকশা চালক বাচ্চু মিয়া ‘অপমানিত হওয়ায়’ তালুকদার পঞ্চায়েতের শিশুদের হত্যার পরিকল্পনা করে। আমরা আলামত উদ্ধার করছি। ইতোমধ্যে বাচ্চুর অটোরিকশা, আরজুর বাড়ি থেকে কোদাল আর শাবল, কয়েকটি বস্তা এবং একটি রক্তমাখা পাঞ্জাবি উদ্ধার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে আরজুর বক্তব্য থেকে হত্যা রহস্য উন্মোচিত হয়েছে।
তিনি জানান, আরজু, রুবেল ও বশিরকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। সোমবার এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে।
আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পুলিশ এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।