আলমডাঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সব অনিয়মই আইনসিদ্ধ হয় টাকায়

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সব অনিয়মই আইনসিদ্ধ হয় টাকায়। এ অভিযোগ এখন গা সওয়া হয়ে গেছে। অভিযোগকারীরা বলেছেন, জমি খারিজবিহীন হোক, দাখিলা-পর্চা না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই। চাহিদা মাফিক অর্থ দিলেই সব ঠিক।
অভিযোগকারীদের ভাষায়, আলমডাঙ্গা রেজিস্ট্রি অফিসের এসব অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করার সব্যসাচী নায়ক হলেন সাব-রেজিস্ট্রার আব্দুর রব। সরকারি মহুরার পদে সদ্য যোগদানকারী দুলালই হচ্ছেন সাব-রেজিস্ট্রারের যাবতীয় দুর্নীতির প্রধান সিপাহসালার। এরকমই অভিযোগ এখন সর্বত্র ছড়িয়েছে। সে কারণে আলমডাঙ্গা সাব রেজিস্ট্রি অফিসকে ব্যঙ্গ করে ‘খাজা বাবার দরবার’ অভিহিত করে অনেককেই বলতে শোনা যায়- কেউ ফেরে না খালি হাতে খাজা বাবার দরবারে। অবশ্য অভিযুক্তরা সব অভিযোগই অস্বীকার করে বলেছেন, ওসব মনগড়া বানোয়াট অভিযোগ।
অভিযোগকারীসূত্রে জানা যায়, আলমডাঙ্গা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রার আব্দুর রব জমি রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে ‘হায়ার ভ্যালু’ নামে নতুন করে ঘুষের প্রচলন করেছেন। জমির মূল্য প্রতি লাখের বিপরীতে তিনি স্ব আবিস্কৃত হায়ার ভ্যালু নেন ৪০০ টাকা হারে। এতে শুধু জমি ক্রেতা-বিক্রেতাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তা নয়, সেই সাথে সরকারও হারাচ্ছে রাজস্ব। হায়ার ভ্যালু দেয়ার ভয়ে ক্রেতা-বিক্রেতারা জমির প্রকৃত মূল্য গোপন করে অনেক কম মূল্য দেখিয়ে দলিল করছেন। ফলে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর পকেট ভারি হচ্ছে সাব-রেজিস্ট্রারের। আইনগতভাবে দলিলে টিপসই দিতে কোনো টাকা নেয়ার বিধান না থাকলেও কখনও কখনও ১০ টাকা আবার কখনও ২০ টাকা করে গ্রহণের প্রচলন ইতোপূর্বে ছিলো। কিন্তু আব্দুর রব সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করার পর টিপসই বাবদ নজরানা এক লাফে ৩ গুণ বৃদ্ধি করে বর্তমানে ৬০ টাকা হারে আদায় করা হচ্ছে। দেদারছে খারিজবিহীন জমি রেজিস্ট্রি করা হচ্ছে। সপ্তায় ২ দিন জমি রেজিস্ট্রি করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি- প্রতিদিন গড়ে ১৪০টি করে দলিল সম্পন্ন হয়। এর মধ্যে ৩০-৩৫ ভাগই খারিজবিহীন বলে দাবি করেছেন একাধিক ডিড রাইটার। তবে এ চরম অন্যায় এমনিতে হয় না। খারিজবিহীন দলিল প্রতি সাব রেজিস্ট্রার গুণে গুণে ২ হাজার ৮০০ টাকা করে পকেটস্ত করেন। দাখিলা না থাকলে মোটেও সমস্যা নেই। এর জন্য গুণতে হয় ২০০ করে টাকা। এছাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে সরবরাহ করা পর্চা হলে তার ভাগ্যে জোটে ‘লোকাল পর্চা’ অপবাদ। এ অপবাদ ঘোচাতে চাহিবামাত্র সাব-রেজিস্ট্রারকে ৫০০ করে টাকা দিতে বাধ্য থাকতে হয়। আরও আছে জমির শ্রেণি সংক্রান্ত দুর্নীতি। এমন আরও অনেক খাতওয়ারি সাব-রেজিস্ট্রার বাবুকে নজরানা দিয়ে খুশি করতেই বর্তমানে আলমডাঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস খাজা বাবার দরবার বনে গেছে বলে ডিড রাইটারসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই মন্তব্য করেছেন।
অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন, উপরোক্ত খাতওয়ারি ঘুষের টাকা হ্রাসের জন্য বেশ কিছুদিন ধরে সাব-রেজিস্ট্রারের সাথে ডিড রাইটারদের দর কষাকষি চলছে। সাব-রেজিস্ট্রার নাকি জানিয়ে দিয়েছেন কোনো খাতের টাকাই কমানো হবে না। প্রয়োজনে রেজিস্ট্রি বন্ধ রাখবেন বলে সাফ হুমকি দিয়ে রেখেছেন।