প্রতি বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায় আর পাবলিক পরীক্ষার অতিরিক্ত অর্থ নেয়ার অভিযোগ যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর বই-পুস্তকের দোকানে নোট বইসহ গাইডে? তার রমরমা বাণিজ্যের জন্য কিছু শিক্ষকসহ অধিকাংশ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেতে ওঠেন। অভিযোগ- আড়ালে উপঢৌকন। অপরদিকে শিক্ষা বিষয়ক সভা সেমিনারে কর্তা বক্তাদের অধিকাংশের মুখেই উচ্চারিত হচ্ছে- নিজেকে গড়ার তাগিদে মুখস্ত এড়িয়ে বই বুঝে পড়ার মুখস্তবুলি।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বছরান্তে ভর্তির সময় নানা খাত দেখিয়ে অর্থ আদায় করা হয়। পরীক্ষার বাড়তি ফি চাপিয়ে দিয়ে স্বল্প আয়ের অভিভাবকদের যেমন নাভিশ্বাস তোলা হয়, তেমনই অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীর পরীক্ষা অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে তার লেখাপড়ার স্বাভাবিক গতিকে বাধাগ্রস্ত করা হয়। হাট-বাজারের বই পুস্তকের দোকানে প্রকাশ্যেই বেচা-বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ নোটবই, গাইডবইসহ অনেক কিছুই। এসব প্রকাশ্যে হলেও প্রশাসন নীরব কেন? প্রশ্নটি যেমন প্রাসঙ্গিক তেমনই খোঁড়া হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে যুক্তিও আছে। যেমন- পরীক্ষার ফরম নিয়ে শিক্ষাবোর্ডে কেরানী বা দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকের আসা-যাওয়া, সেখানে বিদ্যমান খুশি করার রেওয়াজ। আর ভর্তি ফি? ওটা বছরান্তে না নিলে নানা অনুষ্ঠানে আগত কর্তাদের খুশি করবে কীভাবে? তাছাড়া বদলিজনিত বিদায় সংবর্ধনা আছে না! নোটবই, গাইড? এসব আছে বলেই তো উপরি আয় আছে, আছে কোম্পানির দেয়া উপঢৌকন পাওয়া গিন্নির মুখে গল্প। তাইতো এবারও চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহসহ দেশের অধিকাংশ এলাকায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়েরই অধিকাংশ শিক্ষকের বিরুদ্ধেই অভিন্ন অভিযোগ।
আর যাই হোক, কোনো সভ্য সমাজে শিক্ষা নিয়ে এসব মানায় না। শিক্ষা নিয়ে যে জাতি যতোটা দুর্নীতিগ্রস্ত সেই জাতির ভবিষ্যত ততোটাই ক্ষতিগ্রস্ত। শিক্ষক হয়ে দুর্নীতির সাথে আপস অবশ্যই আত্মঘাতী, জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা বললে কোনোভাবেই ভুল বলা হয় না। কেননা, শিক্ষকই সমাজের আদর্শ। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের আদর্শ লালন করে, শিক্ষকের আদর্শ বাস্তবায়নই জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। কোনো যুক্তিতেই শিক্ষককে কি অন্যায়ের সমর্থন করা চলে?