কুষ্টিয়ার কাতলামারীতে ট্রাকচালক কিবরিয়াকে পিটিয়ে বাসের নিচে ফেলে হত্যা

গাংনী প্রতিনিধি: কুষ্টিয়া মিরপুরে এক ট্রাকচালককে পিটিয়ে বাসের নিচে ফেলে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কাতলামারী-দৌলতপুর সড়কের কাতলমারী রাজপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত ট্রাকচালক গোলাম কিবরিয়া (৩২) মেহেরপুর গাংনী উপজেলার হাড়াভাঙ্গা কল্যাণপুর গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলীর ছেলে। ভেড়ামারা এলাকার একটি পিকনিকের বাস ট্রাকে ধাক্কা দেয়ার প্রতিবাদের জেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানায় স্থানীয়রা ও নিহতের পরিবার।
জানা গেছে, বামুন্দী বাজারের আনারুল ইসলামের ট্রাকেরচালক ছিলেন নিহত গোলাম কিবরিয়া। গতকাল সন্ধ্যায় ট্রাকে ভুট্টাবোঝাই করে তিনি কুষ্টিয়ার উদ্দেশে রওনা দেন। পথিমধ্যে গাংনীর বাওট নামক স্থানে মুজিবনগর থেকে ফেরা একটি পিকনিকের বাস তার ট্রাকে ধাক্কা দেয়। ওই বাসে ভেড়ামারার একটি বিদ্যালয়ের কয়েক ছাত্র ও শিক্ষক ছিলেন। ধাক্কায় ট্রাকের ডান পাশের কিছু জায়গায় ভেঙে গেলে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন গোলাম কিবরিয়া। বাওট থেকে বাসটি তাকে অতিক্রম করলে তিনিও পিছু নেন। এক পর্যায়ে মিরপুরের কাতলমারী নামক স্থানে গিয়ে তিনি বাসের পিছু ধরতে সক্ষম হন। ট্রাক সামনে দিয়ে বাসের গতিরোধ করলে বাসের চালক কৌশল অবলম্বন করেন। তিনি মেহেরপুর-কুষ্টিয়া প্রধান সড়ক থেকে কাতলামারী বাজার থেকে দৌলতপুর সড়কের দিয়ে বাসটি ঘুরিয়ে দেন। ট্রাক থেকে নেমে গোলাম কিবরিয়া ওই বাসে উঠতে সক্ষম হন। এ সময় তাকে একা পেয়ে বাসের স্টাফ ও যাত্রীরা তাকে বেদম মারধর করে বাস থেকে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে সড়কে ফেলে দিলে ওই বাসের চাকায় পিষ্ট হন গোলাম কিবরিয়া। বাসের চাকায় গোলাম কিবরিয়ার মাথা থেতলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় এলাকার লোকজন বাসের চালক, হেলপারসহ বাসটিকে আটক করে।
খবর পেয়ে মিরপুর থানা ও আমলা পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। বাসের চালক ও হেলপারকে আটক করে পুলিশ। লাশের ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণের লক্ষ্যে রাতে আমলা পুলিশ ফাঁড়িতে রাখা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে মেহেরপুর জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আহসান হাবীব সোনা, সাবেক সভাপতি এমএ কুদ্দুস, সাবেক কার্যকরী সভাপতি নজরুল ইসলাম নজু, বামন্দী শাখা সভাপতি হবিবর রহমান হবিসহ শ্রমিক নেতৃবৃন্দসহ নিহতের পরিবারের কয়েকজন সদস্য মিরপুর থানায় পৌঁছান। রাতেই নিহতের মেজ ভাই আমজাদ হোসেন বাদী হয়ে ওই বাসের চালক ও হেলপারকে আসামি করে আজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজন যাত্রীর নামে মিরপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আহসান হাবীব সোনা জানান, মেহেরপুর জেলার শ্রমিকরা হত্যাকারীদের বিচার চাই। শ্রমিককের পক্ষ থেকে তিনি শোক প্রকাশ করেছেন।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী জালাল উদ্দীন বলেন, হত্যা নাকি দুর্ঘটনা এই মূহুর্তে বলা যাচ্ছে না। নিহতের পরিবার মামলার আরজি দিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে আজ শনিবার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে গোলাম কিবরিয়ার মৃত্যুর খবরে পরিবার, স্বজন ও গ্রামবাসীর মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহতের স্ত্রী খাতুন স্বামীকে হারিয়ে যেনো পাগল প্রায়। একমাত্র ছেলে রতন হোসেন কুষ্টিয়ায় স্নাতকে ভর্তি হয়েছেন। পিতার অকাল মৃত্যুতে তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। কোনোভাবেই গোলাম কিবরিয়ার না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না নিহতের পরিবার।