মোবাইলফোনে চাঁদাবাজি বেড়ে যাওয়ায় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অসহায় বোধ করছে। যখন যুগ্মসচিব, ডিআইজি প্রিজন, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কাছেও চাঁদা দাবি করে বলা হয়, কথার নড়চড় হলে লাশ ফেলে দেয়া হবে, তখন অপরাধের ব্যাপকতা নিয়ে প্রশ্ন থাকে না। আর ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবি, তুলে নিয়ে মুক্তিপণ চাওয়া, না পেয়ে ক্ষেত্রবিশেষে হত্যা দীর্ঘদিন ধরেই চলে এসেছে। এমনকি বেশ কিছুদিন ধরে শিশুদেরও অপরাধীরা টার্গেট করছে। এ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সুশিক্ষার অভাব, মূল্যবোধের অধঃপতন, অতিরিক্ত ভোগবিলাসসহ নানা কারণেই অনেকে লোভ-লালসার দাস হয়ে যাচ্ছে। যেকোনো অপরাধ করেই পার পাওয়া যায় আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা নিয়ে এ ধরনের বেপরোয়া মনোভাবও একজন সাধারণ অপরাধীকে দুর্ধর্ষ করে তুলছে। মানুষ বিপদে পড়েও অনেক সময় থানা-পুলিশের কাছে যেতে সাহস পায় না। নিরাপত্তা বা বিচারপ্রাপ্তির ওপর এক ধরনের আস্থাহীনতা তাদের মধ্যে কাজ করে। অপরাধীরাও হুমকি দিয়ে রাখে, মুখ খুললে শেষ করে ফেলা হবে। ফলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতা আর অপরাধীদের দৌরাত্ম্য সমানতালেই বাড়ছে।
সারাদেশে চাঁদাবাজি চলছে। প্রতিদিনই স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে, তাতে অপরাধের যে চিত্র পাওয়া গেছে, তা এককথায় ভয়াবহ। কারা বিভাগের উপমহাপরিদর্শকের কাছে মাসে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির স্পর্ধা কারা পায়? কিংবা মুখ্য মহানগর হাকিমের কাছে চাঁদা দাবি কি নিছকই অর্থের জন্য? নাকি আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে কোনো মহল অন্য কোনো ফায়দা লুটতে চায়? তাদের উদ্দেশ্য যাই হোক, অপরাধীদের এই দৌরাত্ম্য সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গার বদরগঞ্জ এলাকায় চাঁদাবাজচক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, চাঁদার দাবিতে গরুব্যবসায়ীর বাড়ির গেটে বোমা সাদৃশবস্তু রেখে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।
চাঁদাবাজিতে মোবাইলফোন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। অর্থাৎ কোনো একটি মোবাইলফোন অপারেটরের নম্বর ব্যবহার করেই চাঁদা দাবি করা হচ্ছে এবং অপরাধীরা সুস্পষ্ট ক্লু রেখে যাচ্ছে। কিন্তু হত্যার হুমকি দেয়া হয় বলে অসহায় ব্যক্তি বা পরিবার মুখ খুলতে পারছে না। মানুষ নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়লে প্রথমেই পুলিশের কাছে যায়। তারপর আসে সামাজিক প্রতিরোধের কথা। তবে পুলিশের কোনো কোনো সদস্যের কারণে বিভাগটির ওপর মানুষ আস্থা রাখতে পারছে না। ব্যক্তিমানুষ অতিমাত্রায় আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ায় কোনো সামাজিক শক্তিও গড়ে উঠছে না। শুভশক্তির এই অসহায় বা দুর্বল অবস্থায় থাকারও সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা।
প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এজন্য রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট অনেক কাঠামোও রয়েছে। তারপরও নিরাপত্তা পুরোপুরি নিশ্চিত করতে না পারা মানেই কোথাও ত্রুটি রয়ে যাচ্ছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্মকমিশনার বলেছেন, ১৭ থেকে ১৮টি চক্র ডিবি পুলিশ শনাক্ত করেছে। তাদের কেউ কেউ ধরাও পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, জামিনে বেরিয়ে অপরাধীরা আগের কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে। এ থেকে স্পষ্ট, মামলা দায়ের বা এর পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলোয় দুর্বলতা থাকে। আর নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি মানেই সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বও বেড়ে যাওয়া। মামলাজটের ফলে এমনিতেই বিচারে ধীরগতি আছে। এছাড়া পুলিশ মামলা দুর্বল করে দেয়। প্রভাবশালী মহলের চাপে অনেক অপরাধী ছাড়া পেয়ে যায়। গোয়েন্দা সক্ষমতাও সীমিত। ফলে আইনের শাসনের দেখা মিলছে না, অপরাধীদের দৌরাত্ম্যও সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এসব দুর্বলতা দ্রুত নিরসন করে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে।