আলমডাঙ্গা ব্যুরো: বহু অপকর্মের হোতা আলমডাঙ্গা উপজেলার লক্ষ্মীপুরের আশরাফুল বাহিনীর হম্বিতম্বিতে তটস্থ হয়ে উঠে এলাকা। আশরাফুলের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তুলে নিতে ও তার বিরুদ্ধচারণকারীদের ওপর চড়াও হয়ে নানা হুমকির প্রেক্ষিতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে গ্রামবাসী। ওসমানপুর গ্রামে ৭ম শ্রেণির ছাত্রীকে অস্ত্রের মুখে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার মামলা তুলে না নেয়ায় নির্যাতিতার বাড়িতে বোমা হামলাসহ বহু অপকর্মের নটরাজ আটক আশরাফুলের মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ গ্রাম ত্যাগ করলেই গতকাল আশরাফুল বাহিনীর তাণ্ডব শুরু হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করলেও এখনও গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার হারদী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মীপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে ২ সন্তানের জনক আশরাফুল ইসলাম। গত ২ অক্টোবর গভীর রাতে আশরাফুল ইসলাম সদলবলে পার্শ্ববর্তী ওসমানপুর গ্রামের শুকুর আলী হাজামের বাড়িতে গিয়ে চড়াও হয়। অস্ত্রের মুখে শুকুর আলী হাজাম, তার স্ত্রী ও বড় ছেলেকে জিম্মি করে তার ১৩ বছরের ছোট মেয়েকে তুলে নিয়ে যায় আশরাফুল ও তার দলবল। ওই মেয়ে ওসমানপুর-লক্ষ্মীপুর নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী ছিলো। এ ঘটনায় অপহৃতার বড় ভাই লিটন আলমডাঙ্গা থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন।
৭ম শ্রেণির ছাত্রীকে বাড়ি থেকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়েই শুধু আশরাফুল থামিয়ে রাখেনি অপকর্ম। মামলা তুলে নিতে নির্যাতিতের পরিবারকে দিয়ে আসছিলো নানা হুমকি-ধামকি। মামলা তুলে না নেয়ায় গত ১৬ অক্টোবর শুক্রবার দিনগত রাত ৯টার দিকে নির্যাতিতার বাড়ির বাইরের পাঁচিলে বোমা হামলা চালায় আশরাফুল বাহিনী। এছাড়া এলাকায় বহু অঘটনের নায়ক আশরাফুল। ইতঃপূর্বেও সে একাধিক বিয়ে করে বলে এলাকায় অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে এলাকায় গ্যাংগ্রুপ গঠন ও নেতৃত্ব দিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও ধর্ষণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। আলমডাঙ্গা থানায় তার বিরুদ্ধে ৭ম শ্রেণির ছাত্রকে অপহরণ ও বোমা হামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। একাধিক মামলা থাকলেও এ ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার তদন্ত এতোদিন শুরুই করেনি পুলিশ। গত ২৫ জানুয়ারি সোমবার আশরাফুলকে পুলিশ আটক করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ মামলার তদন্ত করতে ওসমানপুর যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন ও আলমডাঙ্গা থানার এসআই আফজাল হোসেন। দুপুর ২টার দিকে তারা ওসমানপুর গ্রাম ত্যাগ করলে শুরু হয় আশরাফুল বাহিনীর তাণ্ডব।
পুলিশসূত্রে জানা গেছে, আশরাফুল বাহিনীর হোতা প্রাগপুর গ্রামের মৃত নিয়ামত আলীর ছেলে লিয়াকত, ওসমানপুরের বকর আলীর ছেলে টিপু, একই গ্রামের কিয়ামত আলীর ছেলে আফফান অপহৃত রুমির অভিভাবকদের মামলা তুলে নিতে নানা হুমকি-ধামকি দেয়। এ সময় ওই এলাকায় তাদের হুমকি-ধামকি ও গালিগালাজে ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বিকেলে প্রাগপুর গ্রামের নিয়ামত আলীর ছেলে সুন্নত আলী ওসমানপুর বাজারে চা খেতে গেলে আশরাফুল বাহিনীর ৩ সদস্য আবার তার ওপর চড়াও হয়। সুন্নত আলী কেন পুলিশের সাথে কথা বলেছে- এমন প্রশ্ন তুলে তাকে মারপিট করতে উদ্যত হলে আশপাশের লোকজন বাধা দেয়। কিন্তু তাদের বাধা উপেক্ষা করে আশরাফুল গং বার বার সুন্নতকে হত্যার হুমকি দিতে থাকে। সে সময়েও ভীতিকর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। এক পর্যায়ে ওসমানপুর ফাঁড়ি পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা থেকে এসআই আফজাল ও এস আই সাখাওয়াত সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। ঘটনাস্থলে পুলিশি তৎপরতায় লিয়াকতসহ দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। তবে এখন গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।