শাদা পোশাকে তুলে নেয়ার ২৪ ঘণ্টার মাথায় রবিউলের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার

চুয়াডাঙ্গার ভালাইপুর মোড়সহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় গণহারে চাঁদবাজির এক পর্যায়ে একাধিক মামলার আসামি সাবেক চরমপন্থির
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার ভালাইপুর মোড়সহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় যখন গণহারে চাঁদাদাবি, একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণে ছড়ানো হচ্ছে আতঙ্ক, ঠিক তখনই দুটি খুনসহ বহু মামলার আসামি রবিউল ইসলাম (৪২) ওরফে জীবন দা ওরফে রাসেলের পতন হলো। গতপরশু ভালাইপুর মোড় থেকে শাদা পোশাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়ার পর গতকাল বুধবার ভোরে পাওয়া যায় তার গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ। জীবননগরের দেহাটি-সেনেরহুদা সড়কের কাটাখালী ব্রিজের নিকটস্থ খালের পাড় থেকে গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়।
একাধিক খুন মামলাসহ বহু মামলার আসামি দীর্ঘদিনের হাজতবাস শেষে বাড়ি ফিরে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিলো বলে পরিবারের সদস্যরা জানালেও পুলিশ বলেছে, জামিনে হাজতমুক্ত হয়ে আবারও গ্যাংগ্রুপ গড়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলো। ধারণা করা হচ্ছে, খুনের হুমকি দিয়ে ককটেল বোমা মেরে আদায় করা চাঁদার টাকা নিয়ে বিরোধের কারণেই আভ্যন্তরীণ কোন্দলে তার পতন হয়েছে। অবশ্য রবিউলের ভাইসহ নিকটজনেরা বলেছে, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে মাথায় ও বুকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তাকে কলাবাড়ির এক ব্যক্তি ভালাইপুর মোড়ে ডেকেই ওই শাদা পোশাকধারীদের হাতে তুলে দিয়েছে।
গতকালই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। বাদ মাগরিব নিজ গ্রাম আলমডাঙ্গার চিৎলা ইউনিয়নের ভালাইপুর গ্রামের জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। রবিউল ইসলাম ভালাইপুর গ্রামের আবুল হোসেনের ৮ ছেলে-মেয়ের মধ্যে ছিলো ছোট। রবিউল ইসলাম ওরফে জীবন দা ওরফে রাসেলের রয়েছে এক মেয়ে। মেয়ে রিতা বিবাহিতা। স্ত্রী খাদিজা বেগম তার স্বামীর ভিটেতেই থাকেন।
এদিকে ঘটনাস্থল থেকে ফিরে আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে জীবননগর উপজেলার দেহাটি-সেনেরহুদা সড়কের কাটাখালী ব্রিজের সন্নিকটে খালের পাড় হতে গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে জীবননগর থানা পুলিশ। চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার) মো. বেলায়েত হোসেন ও জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পুলিশ ও স্থানীয়রা বলেছে, ভালাইপুর গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে রবিউল ছিলো কথিত চরমপন্থি দল জনযুদ্ধের (লাল পতাকা) আঞ্চলিক নেতা। তার বিরুদ্ধে দামুড়হুদা থানায় দুটি খুনসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। আলমডাঙ্গা থানাতেও মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের একটি মামলা রয়েছে। দামুড়হুদা থানার ১০টি হত্যা মামলার মধ্যে সে ৮টি মামলায় অব্যাহতি পেয়েছে এবং ২টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। অপরদিকে আলমডাঙ্গা থানার মোটরসাইকেল ছিনতাই মামলায় তার ১০ বছরের সাজা হয়। এর মধ্যে ৫ বছর জেল খাটার পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে কয়েক মাস আগে সে হাজতমুক্ত হয়ে বাড়ি ফেরে। বাড়ি ফিরেই সে চাঁদাবাজিসহ দল গোছানোর কাজ শুরু করে। গত কয়েক দিন ধরে সে জেলার সবগুলো ইটভাটা মালিকদের নিকট চাঁদা চেয়ে ভাটা মালিকদের অতিষ্ঠ করে তোলে।
নিহত রবিউল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা জানান, রবিউল ইসলামকে গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ভালাইপুর মোড় থেকে ৫/৬ জন শাদা পোশাকধারী ব্যক্তি অপহরণ করে। এদিকে বুধবার সকালে কৃষকরা মাঠে যাবার সময় জীবননগর উপজেলার দেহাটি-সেনেরহুদা সড়কের কাঁটাখালী ব্রিজের নিকট রাস্তার পাশে লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে। দুপুর ১২টার দিকে নিহতের সহোদর মোফাজ্জেল হোসেন মোফা নিহত রবিউল ইসলামের লাশ শনাক্ত করেন। বুধবার বিকেলে নিহতের সহোদর মোফাজ্জেল হোসেন মোফা অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে জীবননগর থানায় এ ব্যাপারে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।