উন্নয়নের নামে খালের খণ্ডখণ্ড অংশ অবৈধ লিজ : অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

মুজিবনগরের উন্মুক্ত সরস্বতী খাল বেদখল

মেহেরপুর অফিস: জেলার মুজিবনগর উপজেলার উন্মুক্ত সরস্বতী খালটি এখন বেদখল। মসজিদ, মাদরাসা, গীর্জা ও মন্দিরের উন্নয়নের নামে লিজ দিয়ে প্রাপ্ত অর্থ প্রভাবশালীরা নিজেদের পকেট ভারি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। লিজের টাকা উন্নয়ন খাতে খরচ না করে আত্মসাত করার ঘটনায় মামলার ঘটনাও ঘটছে।
সোনাপুর গ্রামের ফিরোজ আহমেদ মাস্টার জানান, মুজিবনগর উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী গ্রাম নাজিরাকোনা হতে সোনাপুর, ভবেরপাড়া, মানিকনগর ও বল্লভপুর গ্রাম হয়ে বাগোয়ান পর্যন্ত বিস্তৃত সরস্বতি খালটি দৈর্ঘ প্রায় ৭ কিলোমিটার। কৃষকের স্বার্থে ফসলের সবুজ বিপ্লব ঘটাতে খালটি কাটা হয় আশির দশকে। প্রথম দিকে ফসলের ক্ষেতে পানি সেচ, গরু-মহিষের গোসল, পাট পঁচানো ইত্যাদি কাজ হলেও এখন আর সেসব কাজ হয় না। মসজিদ, মাদরাসা, গীর্জা ও মন্দিরের উন্নয়নের নামে স্থানীয় প্রভাবশালীরা সরস্বতি খালে দেড়-দু কিলোমিটারের খণ্ডখণ্ড ভাগ করে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে। এতে ক্ষেতের পানি সেচ, পাট পঁচানো ও গবাদি পশুর গোসল করানোসহ কৃষকের সুবিধা হয় এমন সবকাজ বন্ধ হয়ে গেছে।
মানিকনগর গ্রামের মৃত নফর আলী মল্লিকের ছেলে গ্রাম্য মোড়ল ফিতাজ আলী মল্লিক জানান, মানিকনগর গ্রামের অংশে সরস্বতি খালের প্রায় ২ কিলোমিটার মানিকনগর গ্রামবাসীর দখলে। ৫ সদস্য বিশিষ্ট খাল লিজদাতা কমিটির একজন সদস্যও তিনি। তারা মসজিদ-মাদরাসা, গির্জা ও মন্দিরের নামে প্রতি বছর খালটি ওই অংশ লিজ দিয়ে প্রাপ্ত অর্থ উন্নয়ন কাজে খরচ করেন। তিনি অভিযোগ করেন একই গ্রামের মোহাম্মদ আলী মণ্ডলের ছেলে মুজিবুর রহমান মণ্ডল ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরের জন্য সরস্বতী খালের ওই অংশ ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকায় লিজ নেন এবং একই গ্রামের ময়জুদ্দিন শেখের ছেলে খাল লিজদাতা কমিটির অন্যতম সদস্য আজাদ আলী শেখের নিকট ওই টাকা জমা দেন। কিন্তু আজাদ আলী ওই টাকা মসজিদ-মাদরাসা, গীজা ও মন্দিরের উন্নয়নের জন্য টাকা ব্যয় করেনি। বরং তিনিসহ স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন ওই টাকা ভাগ করে নিয়েছেন। ফিতাজ আলী মল্লিক আরো বলেন এ ব্যাপারে তিনি বাদী হয়ে মুজিবুর রহমান ও আজাদ আলীকে বিবাদী করে মুজিবনগর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ ব্যাপারে আজাদ আলী বলেন টাকা আত্মসাত করা হয়নি। খালে গাছ ভেঙেপড়া ও বাঁশ নুইয়ে পড়ার কারণে মাছ ধরতে পারেনি লিজ গ্রহীতা মুজিবুর রহমান। এছাড়া মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (সাবেক) অরুন কুমার মণ্ডল একাধিকবার বাঁধ কেটে দেয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হন লিজ গ্রহীতা মুজিবুর রহমান। তাই তিনি মাত্র ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। যা উন্নয়ন খাতে ব্যয়ের হিসাব মুজিবনগর থানায় বসে দেয়া হয়েছে। সরস্বতী খালের লিজ বাবদ মানিকনগর জামে মসজিদকে মাত্র ৮০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে বলে জানান মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন।
মুজিবনগর থানার ওসি কাজী কামাল হোসেন বলেন এক পক্ষের অভিযোগ পেয়েছি। মীমাংসার জন্য ২৫ জানুয়ারি উভয় পক্ষকে থানায় ডেকেছিলাম। কিন্তু জরুরি কাজের জন্য সালিসসভা করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়নি।
এদিকে চলতি ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে সরস্বতী খালের মানিকনগর অংশের লিজদাতা কমিটি ৩ লাখ টাকা, ভবরপাড়া লিজদাতা কমিটি ও নাজিরাকোনা লিজদাতা কমিটি ২ লাখ টাকা করে নিজ নিজ অংশ লিজ দিয়েছেন বলে মানিকনগর অংশের লিজদাতা কমিটির অন্যতম সদস্য ফিতাজ আলী মল্লিক জানিয়েছে। এদিকে মুজিবনগর উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি আলহাজ মুন্সি ওমর ফারুক প্রিন্স জানান সরস্বতী খালের অবৈধ দখলকারীর কারণে স্থানীয় চাষিরা তাদের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের ভেতরে ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। মামলা-হামলার ভয়ে তারা প্রভাবশালী অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে মামলা করতে সাহস পাচ্ছেন না। তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

Leave a comment