৭২ ঘণ্টার ধর্মঘটে সরকারি কলেজ শিক্ষকরা : নতুন স্কেলে এমপিও মার্চে

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের চিকিত্সাভাতা ৫০০ টাকা ও বাড়িভাড়া মাসিক ১ হাজার টাকা নির্ধারণ
স্টাফ রিপোর্টার: বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার (এমপিওভুক্ত) শিক্ষকদের অষ্টম স্কেলে বেতন আগামী মার্চের এমপিওতে যুক্ত করা হচ্ছে। নতুন এই বেতন কাঠামোর সাথে বাড়ি ভাড়া ৫শ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ও চিকিত্সাভাতা ৩শ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫শ টাকা নির্ধারণ করে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করেছে অর্থবিভাগ। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অন্যদিকে পে-স্কেলে বৈষম্য দূর করতে টানা ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু করেছেন সরকারি কলেজ শিক্ষকরা।
গতকাল মঙ্গলবার শুরু হওয়া এই ধর্মঘটের পাশাপাশি দাবি আদায়ে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি ক্লাস বর্জন, ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করবেন শিক্ষকরা। এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে পরীক্ষা বর্জনসহ লাগাতার কর্মবিরতি পালন করবে। দাবি আদায়ে এর আগেও কর্মবিরতি পালন করেছেন শিক্ষকরা। প্রসঙ্গত নতুন স্কেলে এমপিওভুক্ত কলেজের একজন প্রভাষকের মূল বেতন হবে ২২ হাজার টাকা (নবম গ্রেড)। বর্তমানে তারা ১১ হাজার টাকা পাচ্ছেন। সহকারী অধ্যাপকেরা পাবেন ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা (ষষ্ঠ গ্রেড)। এখন পাচ্ছেন ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। আর অধ্যক্ষদের হবে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এতো দিন পাচ্ছিলেন ২৫ হাজার ৭৫০ টাকা। আর বেসরকারি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষকের মূল বেতন হবে ১০ম গ্রেডে ১৬ হাজার টাকা। এখন পাচ্ছেন আট হাজার টাকা। আর জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষকের বেতন হবে ২২ হাজার টাকা (নবম গ্রেড)। এখন পান ১১ হাজার টাকা। বর্তমানে সারাদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী আছেন প্রায় পাঁচ লাখ। তারা মূল বেতনের শতভাগ সরকার থেকে পেয়ে থাকেন।
একটি সূত্র অবশ্য বলছে, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য প্রয়োজনীয় বাড়তি ২ হাজার ৪শ কোটি টাকা সংশোধিত বাজেটে সংকুলান রেখে নতুন স্কেলে বেতন দিতে হলে বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের (জুলাই’১৫ থেকে বকেয়াসহ) মার্চের এমপিওতে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি অনিশ্চিত হতে পারে বা ভাতার অংশ আপাতত বাদ রেখে শুধু বেতন দেয়া হতে পারে। সরকারি কলেজ শিক্ষকদের সমস্যার মধ্যে অন্যতম গ্রেড বৈষম্য দূর করতে তাদের দেয়া সুপারিশ সচিব কমিটির কাছে বিবেচনায় রয়েছে। অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতো ১ জুলাই থেকেই পঞ্চম গ্রেডের সহযোগী অধ্যাপকদের, অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে তৃতীয় গ্রেডের বেতন দিতে সরকারি আদেশ জারির দাবি জানানো হয়। নায়েম মহাপরিচালক, এনসিটিবি চেয়ারম্যান, সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং জেলা সদরের অনার্স ও মাস্টার্স কলেজের অধ্যক্ষের পদকেও গ্রেড-১ এ উন্নীত করাসহ ৬ দফা দাবি করছেন সরকারি শিক্ষকেরা। বিকল্প ব্যবস্থা চালু না হওয়া পর্যন্ত সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল রাখারও দাবি শিক্ষকদের।
বর্তমানে দেশে ৩১০টি সরকারি কলেজ, ১৪টি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ (টিটিসি), ১৬টি সরকারি কমার্শিয়াল কলেজ ও চারটি সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের পদ আছে ১৫ হাজার ২৪৬টি। এর মধ্যে অধ্যাপকের পদ ৬৩৪টি, সহযোগী অধ্যাপক দুই হাজার ৪০৩টি, সহকারী অধ্যাপক চার হাজার ২১৪টি ও প্রভাষকের পদ সাত হাজার ৯৯৫টি । আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি লাগাতার কর্মবিরতি পালনেরও ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা।
শিক্ষা সমিতির মহাসচিব আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, সকল সরকারি কলেজ, তিনটি আলিয়া মাদরাসা, ১৪টি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ ও ১৬টি কমার্শিয়াল কলেজে কর্মবিরতি চলছে। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের এই কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষা অধিদফতর থেকে সচিব কমিটির কাছে একটি সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। ওই সুপারিশে দ্বিতীয় গ্রেডে ৪০টি পদ অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। তবে, এই গ্রেডে আরো পদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হবে।
অপরদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল, কৃষিবিদ ও চিকিত্সক (প্রকৃচি) ও ২৬ ক্যাডারের দাবি বাস্তবায়নে দেয়া সুপারিশগুলো এখনো সচিব কমিটির পর্যালোচনায় রয়েছে। ঠিক কবে নাগাদ তা ঠিকঠাক করা হবে সেটি নিশ্চিত নয়। যদিও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৃচি-বিসিএস (সমন্বয় কমিটি) ২৭ ক্যাডার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মচারীদের আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে। ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল নেতৃবৃন্দ বলছেন, ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকদের গ্রেড-১ পদের স্কেল ও মর্যাদা দেয়ার বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হয়নি। তবে নন-ক্যাডার প্রবেশ পদে ক্যাডার পদের ন্যায় অষ্টম গ্রেড প্রদানে অর্থ বিভাগ সম্মত হয়েছে। এছাড়া চাকরি সংক্রান্ত সংজ্ঞায়ন সম্পর্কিত সমস্যাটির সমাধান হবে বলে অর্থ বিভাগ তাদের নিশ্চিত করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব সোহরাব হোসাইনকে পে-স্কেল সমস্যা সমাধানে কিছু সুপারিশ দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যাতে আগের মতো সুযোগ-সুবিধা বহাল থাকে, সেভাবেই তারা সরকারের কাছে সুপারিশ দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে ২৫ শতাংশকে গ্রেড-১-এ (সচিবের সমান) উন্নীত করার সুপারিশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৫ শতাংশ শিক্ষককে সিনিয়র সচিবের সমান বেতন-স্কেল দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এ সুপারিশগুলো এখন পর্যালোচনা করছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।